এডমিশন টিউন https://www.admissiontune.com/2021/05/eat-less-food-for-long-life.html

দীর্ঘ জীবনের জন্য খাদ্য কম খান

বাংলাদেশে বর্তমানে খাদ্যসম্পদের দিক দিয়ে বিশ্বের অনেক দেশকে ছাড়িয়ে গেছে, তবুও বর্তমানে বিভিন্ন জরিপে দেখা যায় এখনো অনেক লোক অপুষ্টিতে ভুগছে, দীর্ঘ জীবনের জন্য কম খাবার কথা বললে হয়তো কিছুটা অদ্ভুত শোনায়। কিন্তু তবু, বিজ্ঞানীরা বলছেন, কথাটা সত্যি; স্বল্প খাদ্য দীর্ঘজীবন লাভের পক্ষে অনুকূল। 
দীর্ঘ জীবনের জন্য খাদ্য কম খান, খাদ্যের উপাদান, খাদ্য ও পুষ্টি, কাঁচা লবণ, চিনি, শর্করা, টমেটো, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, করলা, লালশাক, লেটুস পাতা, মটরশুঁটি, খেজুর, আম, কাঁঠাল, লিচু, ডালিম, কমলা, কলা, পেয়ারা, আমলকীর উপকারিতা, আমলকির সিরাপ, বাদাম খাওয়ার উপকারিতা, বাদাম তেল, ওমেগা-৩, ওমেগা-৩ ক্যাপসুল

বার্ধ্যকে সতেজতা ধরে রাখতে গবেষণা 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত বিজ্ঞানী রয় ওয়ালফোর্ড মানুষের দীর্ঘজীবন লাভের সমস্যা নিয়ে গবেষণা করছেন প্রায় তিন দশক ধরে। লস অ্যাঞ্জেলসে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের গবেষক ওয়ালফোর্ড এবং তাঁর সহকর্মীদের মতে, আগামী দিনে ৯০ বছরের বৃদ্ধ লোকের দৈহিক সামর্থ্য হবে আজকে ৫০ বছর বয়সী লোকের মতো। তাঁরা মনে করছেন, কী করে তা সম্ভব তার রহস্য তাঁরা ভেদ করেছেন। রহস্যটা হল বার্ধক্যকে বিলম্বিত করা - অর্থাৎ বার্ধক্য দীর্ঘায়িত না করে তারুণ্য ও যৌবনকে দীর্ঘস্থায়ী করা।

কথাটা শুনতে যত সহজ বাস্তবে ততটা সহজসাধ্য বলে মনে হয় না। যৌবনকে চিরস্থায়ী করার স্বপ্ন দেখছে মানুষ সেই আদিকাল থেকে। তার জন্য তপস্যা করেছে, অমৃত লাভের, কখনো ইহলোকে বার্ধক্যের কাছে পরাস্ত হয়ে প্রতীক্ষা করেছে পরলোকে অনন্ত যৌবনপ্রাপ্তির প্রত্যাশায়।

অথচ রয় ওয়ালফোর্ড বলছেন, অমৃতের প্রয়োজন নেই - শুধু কম খান, অপুষ্টি নয়, প্রয়োজন স্বল্প পুষ্টির। অর্থাৎ এমন খাদ্য খেতে হবে যাতে ক্যালরি থাকবে কম, কিন্তু ভিটামিন আর খনিজ পদার্থ থাকবে যথেষ্ট পরিমাণে। অন্তত গবেষণাগারে ইঁদুরের ওপর এ ধরনের খাদ্য প্রয়োগ করে তাঁরা উৎসাহজনক ফল পেয়েছেন। সাধারণত যে ইঁদুর বাঁচে মাত্র দুবছর, এ ধরনের খাদ্য খেয়ে তারা বেঁচেছে চার বছর। তাদের চেহারায় আর চলাফেরায় ছিল সতেজ তারুণ্য। মানুষের ওপরও এমনি ফল হবে বলে তাঁরা আশা করছেন।

আরও পড়ুনঃ চোখের যত্নে চশমা কি জরুরি

ওয়ালফোর্ডের মূল বক্তব্য হল, এ যাবৎ দীর্ঘজীবন লাভের জন্য যেসব গবেষণা হয়েছে তার লক্ষ্য ছিল বার্ধ্যক্যের নানা রোগের হাত থেকে পরিত্রাণ পাওয়া - যেমন, ক্যানসার, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, সন্ন্যাস (আধুনিককালে একে মৃগীরোগ বলা হয়; এটি হলে খিঁচুনি হয়। এখন পর্যন্ত এর সঠিক কারণ বিজ্ঞানীরা বের করতে পারেনি।) এবং বাত। কিন্তু বার্ধক্যে পৌঁছে তার উপসর্গগুলির সাথে লড়াই না করে বরং চেষ্টাটা হওয়া উচিত বার্ধক্যে পৌঁছবার আগেই সেগুলি প্রতিহত করা। আজকে জরাবিজ্ঞানীরা মানুষের দেহে কেন জরা দেখা দেয় আর কী করে জরাজনিত বিভিন্ন ব্যাধিকে প্রতিরোধ করা যায় সেদিকেই তাঁদের দৃষ্টি দিচ্ছেন। 

বার্ধক্যে ডিএনএর ভূমিকা

মানুষের দেহকোষের কেন্দ্রে রয়েছে বংশগতির ধারক ও বাহক অসংখ্য ডি.এন.এ. অণু আর তাদের সমাবেশে তৈরি অসংখ্য জিন। জীবনযাত্রার স্বাভাবিক ঘাত-প্রতিঘাতে এসব ডি.এন.এ. অণুতে সব সময়ই কিছু না কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি ঘটতে থাকে, ফলে দেহযন্ত্রের ক্রিয়াকলাপ ব্যাহত হতে পারে। কোন ডি.এন.এ. ক্ষতিগ্রস্ত হলে কোষটি সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়ে যায় অথবা বলগাহীনভাবে বংশ বৃদ্ধি করতে থাকে - যেমন ঘটে ক্যানসারে ক্ষেত্রে। এজন্য ক্রমে ক্রমে দৈহিক টিস্যু বা দেহকলা দুর্বল ও অক্ষম হয়ে পড়ে। তাতেই দেখা দেয় বার্ধক্যের নানা ব্যাধি। DNA কে অনেকটা ফটোকপি মেশিনের মোট বলতে পারি। ডিএনএ কোষ বিভাজনের সময় কোষের নির্ভুল প্রতিলিপি তৈরি করে থাকে। 

আরও পড়ুনঃ হৃদরোগ কি, কেন হয়?

অবশ্য দেহের ডি.এন.এ. - কে এ ধরনের ঘাত ও প্রতিঘাত থেকে রক্ষা করার জন্য রয়েছে দেহের ইমিউনিটি বা অনাক্রম ব্যবস্থা। ওয়ালফোর্ড বলছেন, এই অনাক্রম ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে বার্ধক্যকে বিলম্বিত করতে পারে এমন কিছু জিনও রয়েছে জীবদেহে। 

তারুণ্য ধরে রাখতে উষ্ণতা

অন্যদিকে দেখা যায় দেহের উষ্ণতা কম থাকলে আয়ু বেড়ে যায় বলে মনে হয়। ব্রাজিলের এক জাতের মাছের স্বাভাবিক আয়ু কম, কন্তু অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা পানিতে রাখলে তাদের আয়ু হয় দ্বিগুণ। সব মানুষই হয়তো একদিন দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের কৌশল আয়ত্ত করবে। কিন্তু তাপমাত্রা কমাবার আর একটা অপেক্ষাকৃত সহজ উপায় হল খাদ্য নিয়ন্ত্রণ। কম খেলে দেহের উষ্ণতা কিছুটা কম থাকে। 

খাদ্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আয়ু বৃদ্ধির গবেষণা অবশ্য একেবারে হালের নয়। ১৯৩৫ সালে একজন গবেষক ইঁদুরের খাদ্য গ্রহণ স্বাভাবিকের তুলনায় ৬ শতাংশে কমিয়ে এনে দেখতে পান তাদের আয়ু দ্বিগুণ হয়েছে। কিন্তু ইঁদুরের শৈশব অবস্থা থেকে পরীক্ষাটি শুরু করা হলেই কেবল এ ধরনের ফল পাওয়া যায়। পূর্ণবয়স্ক ইঁদুরের খাদ্য আকস্মিক কমিয়ে দিলে তাতে বরং তাদের দেহের বিপাকক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং আয়ু কমে যায়। সাম্প্রতিককালে গবেষকরা দেখেছেন, এ সমস্যার সমাধান হল খাদ্যে গ্রহণ আকস্মিক না কমিয়ে ধীরে ধীরে কয়েক মাস ধরে কমানো। তাতে বিপাকক্রিয়ার ক্ষতি হয় না, বরং তারুণ্য ও যৌবন দীর্ঘকাল বজায় থাকে। 

বার্ধক্যরোধে ওয়ালফোর্ড নীতি

ওয়ালফোর্ড বলছেন, এই একই নিয়ম মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না হওয়ার কোন কারণ নেই। তাঁর নিজের বয়স এখন ষাট বছর। তিনি মিষ্টি, সাদা চিনি এবং লবণ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। গড়পড়তায় তিনি দৈনিক ২,১০০ ক্যালরি পরিমাণ শক্তিমানের খাবার খান, সেই সাথে সপ্তাহে দুদিন অভুক্ত (সেদিন শুধু সকাল আর সন্ধ্যায় খেতেন; রোজা পালনের মত বলতে পারেন) থাকেন। তাঁর বিশ্বাস এর বদলে তিনি পাচ্ছেন দৃষ্টি ও শ্রবণের তীব্রতা, মনের সজীবতা, ত্বকের ঔজ্জ্বল্যঅর্থাৎ এক কথায় দীর্ঘ যৌবন ও সতেজ তারুণ্য। এমন প্রতিদান পেলে তাঁর মতো ওটুকু ত্যাগ স্বীকারে হয়তো অনেকেই প্রস্তুত হবেন।

আরও পড়ুনঃ অণুজীব নিয়ে কিছু কথা

ওয়ালফোর্ড আর তাঁর সহকর্মীরা দেহের প্রয়োজনীয় সব রকম ভিটামিন আর খনিজ দ্রব্য পাওয়া যায় এমন ধরনের খাদ্য তালিকা তৈরি করেছেন। দীর্ঘজীবনের ওপর গবেষণার জন্য একটি গবেষণাগারও তাঁরা প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাঁদের ধারণা, ভবিষ্যতে হয়তো মানুষের পক্ষে দেড়শ বছর বাঁচা এমন কিছু কঠিন ব্যাপার হবে না। আর আগামী দিনে সব মানুষই এমনি দেড়শ বছর পর্যন্ত বাঁচতে চাইবে, যদি সে বাঁচার অর্থ বার্ধক্য নিয়ে বাঁচা নয়, সজীব তারুণ্য নিয়ে বাঁচা। বলা বাহুল্য, আজকের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো বাংলাদেশে স্বল্প পুষ্টি গ্রহণ কোন সমস্যাই নয় - এ দেশের বেশির ভাগ মানুষই বেঁচে আছে স্বল্প পুষ্টি গ্রহণ করে। কিন্তু ওই যে বিজ্ঞানীরা বলছেন, চাই সুষম খাদ্য - অর্থাৎ খাদ্যে থাকা প্রয়োজন দরকারী সব ভিটামিন আর খনিজ পদার্থ - শুধু তার ব্যবস্থা করা গেলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সব মানুষের দেড়শ কিংবা বছর বাঁচা হয়তো খুব দুঃসাধ্য হবে না।

বার্ধক্যরোধে যা অবশ্যই খাবেন

আসলে বার্ধক্যরোধ বলতে আমরা বয়স অনুসারে পুরোপুরি বৃদ্ধের ছাপ দেহে ও মনে প্রতিয়মান না হওয়াকে বুঝাচ্ছি। যেমনঃ অনেকে দেখা যায় ৫০ এর কোটায় গিয়ে সব চুল পেকে যায় কিংবা চামড়া কুঁচকে যায়। খাদ্য গ্রহণের উপর নিয়ন্ত্রণ আনলেই এসব থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। আমলকীর উপকারিতা সম্পর্কে আমরা সবাই কম-বেশি জানি। এটি আমাদের ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য ঠিক রাখে। তাছাড়া বর্তমানে বাজারে আমলকির সিরাপ পাওয়া যায়। বাদাম খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে আর নাই বললাম ব্রেইনের পাশাপাশি হার্ট ভালো রাখতে এর জুড়ি নেই। বর্তমানে বাদাম তেল পাওয়া যায় যা খুবই উপকারী। রূপচাঁদা মাছে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড হার্টের জন্য ভালো। রূপচাঁদা মাছ ক্রয় করা সম্ভব না হলে চিকিৎসকের পরামর্শে ওমেগা-৩ ক্যাপসুল নিতে পারেন। এটি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, ডিপ্রেশন দূরীকরণ, লো প্রেসার নিরাময়সহ অনেক কাজ করে থাকে। ডিমের কুসুম মস্তিষ্ককের জন্য উপকারী (তবে চিকিৎসক খেতে নিষেধ করলে তাদের ক্ষেত্রে প্রয়োজন নেই)। আনারস ও কাঁচা হলুদে থাকা ভিটামিন সি সর্দি কাশি নিরাময়ে সাহায্য করে। এভাবে লিখতে থাকলে প্রচুর খাদ্যের নাম চলে আসবে। সংক্ষেপে বলা যায়, যেসব খাদ্যে শর্করা বা ক্যালরির পরিমাণ বেশি সেগুলো না খাওয়ার চেষ্টা করবেন। দুধ, ডিম, ছোট মাছ, শাকসবজি, বিভিন্ন ফলমূল বেশি পরিমাণে খেতে হবে। এদের মধ্যে টমেটো, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, করলা, লালশাক, লেটুস পাতা, মটরশুঁটি, খেজুর, আম, কাঁঠাল, লিচু, ডালিম, কমলা, কলা, পেয়ারা, ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।  

আরও পড়ুনঃ মানুষের ঘুম পায় কেন? 

বার্ধক্যরোধে যা কম খাবেন

কাঁচা লবণ আমাদের হাড়ের ক্যালসিয়াম শুষে নেয়। তাছাড়া লো প্রেসারের রোগীদের কাঁচা লবণ খাওয়া উচিত না। চিনি কম পরিমাণে খেতে হবে। এটি দেহে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ধূমপান করা যাবে না। তেলযুক্ত খাবার খাবেন না। সকালে ভারী নাস্তা করবেন না।

সবার সাথে শেয়ার করুন
এই পোস্টে 0 জন কমেন্ট করেছেন

এডমিশন টিউন কী?