এডমিশন টিউন https://www.admissiontune.com/2021/06/how-the-idea-of-technology-dependent-biotechnology-comes-to-the-mind-of-scientists.html

প্রযুক্তি নির্ভর জীবপ্রযুক্তির ধারণা কীভাবে বিজ্ঞানীদের মাথায় আসে

বর্তমান প্রযুক্তি নির্ভর এই বিশ্বে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের স্বাচ্ছন্দ্য বৃদ্ধির জন্য বিজ্ঞানীদের মাথায় জীবপ্রযুক্তি ধারণা চলে আসে। তার ফলে আজ পৃথিবীর উন্নত আর অনুন্নত দেশগুলোর মধ্যে প্রভেদের মাপকাঠি যতটা না অর্থসম্পদের পার্থক্য তার চেয়ে ঢের বেশি হল বিজ্ঞান আর প্রযুক্তি নির্ভর সামর্থ্যের তারতম্য।
প্রযুক্তি নির্ভর জীবপ্রযুক্তির ধারণা কীভাবে বিজ্ঞানীদের মাথায় আসে, প্রযুক্তি নির্ভর, জীবপ্রযুক্তি, বিজ্ঞানী, প্রযুক্তি, জীবজগৎ

এ যাবৎ মানুষের লব্ধ বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিকে শুধু গুটিকয়েক উন্নত দেশের একচেটিয়া সম্পদ বলে গণ্য করা যায় না। প্রযুক্তি নির্ভরতা সারা দুনিয়ার মানুষের সাধারণ ঐতিহ্য, একে কুক্ষিগত করে রাখার অধিকার কারো নেই। তাই আজ দাবী উঠেছে অনুন্নত দেশগুলোর উন্নয়ন কার্যক্রমের স্বার্থে অপেক্ষাকৃত প্রযুক্তি নির্ভর দেশ থেকে অবাধে প্রযুক্তি হস্তান্তর নিশ্চিত করতে হবে।

আরও পড়তে পারেনঃ হৃদরোগ থেকে বাঁচার উপায়

কিন্তু এটি যে শুধু উন্নত দেশে রয়েছে তা নয়। অনেক উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর প্রাণী আমাদের চারপাশে প্রকৃতির অবারিত অঙ্গনে! প্রকৃতির জীবজগতের বাসিন্দারা নানা বিচিত্র পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াবার জন্য তাদের দেহে সৃষ্টি করেছে বহু বিচিত্র প্রযুক্তি নির্ভর কলাকৌশল! বৈরী পরিবেশের সাথে সংগ্রামে টিকে থাকার জন্য নানা জীবজন্তুকে বহু কোটি বছরের অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে ঠেকে ঠেকে আয়ত্ত করতে হয়েছে নানা প্রযুক্তি। এসব কলাকৌশল থেকে মানুষের শেখার রয়েছে অনেক কিছু।

দুনিয়াতে কীটপতঙ্গ আছে অন্তত বিশ থেকে পঁচিশ লাখ প্রজাতির। তাদের মধ্যে আমাদের অতি পরিচিত মাছির যে আবার কিছু অসাধারণ গুণ থাকতে পারে তা সচরাচর মনে হবে না। কিন্তু দেখা গিয়েছে মাছির মতো এমন শক্তিশালী ঘ্রাণেন্দ্রিয় খুব কম প্রাণিরই আছে। তার প্রিয় খাদ্যের অতি সূক্ষ্ম ঘ্রাণও মাছি বহু দূর থেকে টের পায়। এই ক্ষমতার জন্য বিজ্ঞানীরা আজ মাছিকে নভোযানে ব্যবহার করার কথা ভাবছেন। নভোযানে কক্ষের হাওয়ায় কার্বণ ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ নির্দিষ্ট মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে মাছি তার হদিস পাবে; অপর সূক্ষ্ম বিদ্যুৎ প্রবাহের মাধ্যমে মানুষকে সে খবর জানিয়ে দেবে। এতে নভোযাত্রা নিরাপদ হতে ধারণা দিতে পারবে সহজেই।

কীটপতঙ্গদের কান আদৌ তাদের মাথায় থাকে না; থাকে হয় পায়ে অথবা পেটে। অতি সাধারণ ঘাসফড়িং-এর কান এক আশ্চর্য বস্তু। এই কান এমন সূক্ষ্ম আওয়াজ শুনতে পায় যার তরঙ্গের বিস্তার একটি পরমাণুর ব্যাসের চেয়েও ছোট। 

এই অতি সূক্ষ্ম সংবেদী এতো প্রখর যে প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে ভূমিকম্প হলে তার কাঁপুনিও টের পেয়ে যাবার কথা ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উড়ে বেড়ানো একটি ঘাসফড়িং-এর। ঘাসফড়িং-এর কানের এই কৌশল আয়ত্ত করতে পারলে মানুষের যোগাযোগের ক্ষেত্রে অগ্রগতি অনেক সহজসাধ্য হত। পাশাপাশি এটিকে প্রযুক্তি নির্ভর কাজে লাগিয়ে ভূকম্পনের আগাম বার্তা দেওয়া যায় কিনা সেই চেষ্টা চলছে। 

তেলাপোকার চোখ তাপ ʻদেখতেʼ পায়। বিভিন্ন জিনিসের গায়ের তাপমাত্রা তারা চোখে দেখেই বুঝতে পারে। এমনকি এক-দশমাংশ ডিগ্রি উষ্ণতার তফাতও এভাবে তাদের কাছে ধরা পড়ে। এমনি অতি সূক্ষ্ম তাপের তারতম্য দেখে বিভিন্ন জীব চিনতে পারে র‍্যাটল-স্নেক নামে এক জাতের সাপ। এই কৌশল বিজ্ঞানীরা প্রযুক্তি নির্ভর কাজে লাগাতে চেষ্টা করছেন যেমনঃ তাপসন্ধানী ক্ষেপণাস্ত্রে।

জীবপ্রযুক্তি আর প্রযুক্তির মধ্যেকার সম্পর্ক নিয়ে বিজ্ঞানের যে বিভাগে আজ চর্চা চলছে তাকে বলা হয় বায়োনিক্স। এই সম্পর্কের বিষয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানী সম্মেলন হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেটন, ওহায়োতে ১৯৬০ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর। এই তারিখটিকে তাই বায়োনিক্সের জন্ম তারিখ বলে ধরা যেতে পারে। তার পর থেকেই জীবজগতের নানা বিচিত্র ও উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর কৌশল আহরণ করে মানুষের প্রয়োজনে লাগাবার জন্য বিজ্ঞানীরা কাজ করে যাচ্ছেন।

টেলিভিশনে বায়োনিক উওম্যান আর মিলিয়ন-ডলার ম্যান দেখতে দেখতে অনেকের ধারণা হয়েছে বুঝি বায়োনিক্স-এ ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির ব্যাপার থাকতেই হবে। কিন্তু আসলে ইলেকট্রনিক যন্ত্রের বিষয় ছাড়াও জীবপ্রযুক্তি থেকে মানুষের শেখার বিষয়ের অন্ত নেই। আজকের বিজ্ঞানীরা বলছেন অতি ছোট চুনোপুঁটি থেকে বিশাল তিমি, হামিংবার্ড থেকে উটপাখি, ইঁদুর থেকে হাতি, ধানের চারা থেকে বিশাল বট-জীবজগতের সবকিছুর গড়নের মধ্যেই মানুষের জন্য অনুকরণের উপকরণ রয়েছে।

জীবজগতে উন্নত প্রযুক্তির সন্ধান পাওয়া অবশ্য একেবারে নতুন নয়। আজ থেকে প্রায় দুশ বছর আগে ইতালির বিজ্ঞানী স্পালানৎসানি লক্ষ্য করেন বাদুড়রা কি এক আশ্চর্য কৌশলে ঘোর আঁধার রাতেও বাধা-বিঘ্ন এড়িয়ে নিরাপদে উড়ে বেড়াতে পারে। তিনি কিছু বাদুড়ের চোখ বেঁধে দিয়ে দেখলেন তাতে তাদের উড়তে বা পোকামাকড় ধরে খেতে কোন অসুবিধেই হয় না। কিন্তু আরো পরীক্ষা করতে করতে দেখা গেল কান ছিপি দিয়ে বন্ধ করে দিলে বাদুড় একেবারে অসহায় হয়ে পড়ে।

ব্যাপারটার রহস্য বোঝা গেল এই শতকের শুরুতে মানুষের শোনার মতো শব্দের চাইতে বেশি কম্পনহারযুক্ত অতিশব্দের রহস্য জানার পর। আসলে বাদুড়রা মুখ থেকে ছুড়ে দেয় উচ্চকম্পনের অতিশব্দের ঢেউ। সেই ঢেউ সামনের কোন বস্তু থেকে ঠিকরে ফিরে এসে কানে পড়লে তা থেকে বাদুড় বাধার অস্তিত্ব টের পায়। অন্ধকার ঘরে অসংখ্য সরু তার ঝুলিয়ে তাতে যদি একটা বাদুড়কে চোখ বেঁধে ছেড়ে দেওয়া যায় তাহলেও সেটা কোন তারে আদৌ ধাক্কা না খেয়ে উড়ে বেড়াতে পারে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বেতার তরঙ্গের সাহায্যে শত্রু বিমানের উপস্থিতি বোঝার জন্য রাডার আবিষ্কৃত হয়। এই রাডারের সাথে বাদুড়ের দেখার ব্যবস্থার আশ্চর্য মিল রয়েছে যা প্রযুক্তি নির্ভর হতে সাহায্য করেছে। এমনি সূক্ষ্ম শব্দতরঙ্গ ছুড়ে দিয়ে জাহাজ থেকে সমুদ্রতলের গভীরতা মাপার বা শত্রু জাহাজের উপস্থিতি জানার জীবপ্রযুক্তির কৌশল মানুষ আয়ত্ত করেছে মাত্র এই শতকের শুরুতে।

ব্যাঙ জীবপ্রযুক্তির আরেকটি উদাহরণ। আর তার লম্বা জিভটা মুখের সামনে আটকানো, পেছনে খোলা। মুখের কাছাকাছি কোন মাছির নড়াচড়া দেখলে ব্যাঙ চোখের পলকে তার জিবের ডগা সামনে ছুড়ে দিয়ে মাছি ধরে মুখে পুরে ফেলতে পারে। ব্যাঙের চারপাশে যদি অসংখ্য মরা মাছি রাখা যায় তাহলে সে তা টেরও পাবে না। এমনিভাবে সামনে কোন বিপজ্জনক শত্রু পড়লে ব্যাঙ তার সবকিছু দেখতে পায়, কিন্তু যেসব বস্তু থেকে বিপদের আশঙ্কা নেই তার চোখ তা দেখে না। ব্যাঙের চোখের এই জীবপ্রযুক্তি অনুকরণ করে বিজ্ঞানীরা ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণে প্রয়োজনীয় বস্তু চিনে নেবে এমন বিশেষ ধরনের সন্ধানী চোখ স্থাপনের চেষ্টা করছেন-এমন চোখ যা শুধু প্রয়োজনীয় বস্তু দেখবে আর অপ্রয়োজনীয় বস্তুতে কোন সাড়া দেবে না।

মথ রাতের বেলা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে। এর কান হল পেটের ওপর। আর সে কান এমন সূক্ষ্ম অতি শব্দ শুনতে পায় যা মানুষের তৈরি সবচেয়ে শক্তিশালী মাইক্রোফোনেরও শ্রুতির এলাকার বাইরে। এটির জীবপ্রযুক্তি-এর উদাহরণ।

এমনি প্রযুক্তি নির্ভর ক্ষমতা আছে পেঁচার কানে। মাটিতে ঝরা পাতার তলায় লুকানো ইঁদুর যদি কিছু চিবুতে থাকে তাহলে সে শব্দ শুনে পেঁচা ঠিক তার অবস্থান বুঝে ফেলে আর ছোঁ মেরে তাকে তুলে নিতে পারে সেই অদৃশ্য অবস্থান থেকে।

মশারও রয়েছে একটি আশ্চর্য ক্ষমতা। শুধু দ্রুতবেগে পাখা নেড়ে মশা এমন গুঞ্জন সৃষ্টি করে যা আর সব রকম গোলমালের আওয়াজ ভেদ করে যেতে পারে।যত জোরালো শব্দ হোক না কেন, তার ভেতর দিয়ে মশার গুঞ্জনের বার্তা প্রায় পঞ্চাশ মিটার দূর পর্যন্ত অন্য মশার কাছে ঠিক পৌঁছে যায়। মানুষের বার্তা বিনিময় নানা রকম প্রাকৃতিক গোলমাল বা বিদ্যুৎ ক্ষরণের ফলে ব্যাহত হয়। মশার শব্দ নিক্ষেপের কৌশল আয়ত্ত করতে পারলে জীবপ্রযুক্তি’র ব্যবস্থায় উন্নতি টবে।

এসব জীবপ্রযুক্তি কি মানুষের পক্ষে তৈরি করা সম্ভব? আসলে জীবদেহের সকল ক্রিয়াকলাপের মূলে রয়েছে বৈদ্যুতিক তাড়না। জীবদেহের চেতনাবাহী যত অঙ্গ বহির্জগতের সঙ্গে দেহকে সংযুক্ত করে তা সবই মূলত এক ধরনের শক্তিকে অন্য ধরনের শক্তিতে রূপান্তরের ব্যবস্থা তাই একে কৌশল না বলে জীবপ্রযুক্তি বলছি। মানুষের তৈরি মাইক্রোফোন শব্দের তরঙ্গকে রূপান্তরিত করে বিদ্যুতের তরঙ্গে; সেই বিদ্যুৎতরঙ্গ লাউডস্পীকারের মধ্য দিয়ে গেলে আবার মূলের অনুরূপ শব্দতরঙ্গের সৃষ্টি হয়। একইভাবে আমাদের কানের স্নায়ুতন্ত্র শব্দ তরঙ্গকে পরিণত করে বিদ্যুৎ তরঙ্গে। শিশু যখন কাঁদে তখন সেই শব্দ তরঙ্গ মা’র কানের মাধ্যমে মস্তিষ্কে গিয়ে পৌঁছায় বিদ্যুৎ তরঙ্গ হিসেবে। সেখান থেকে প্রত্যুত্তর হিসেবে একটি বৈদ্যুতিক তাড়না ছোটে পায়ের মাংস পেশীতে, মা তখন এগিয়ে যায় শিশুর দিকে।

জীবজগতের এসব প্রযুক্তিকৌশল কাজে লাগাবার জন্য যেমন প্রয়োজন জীববিজ্ঞানীদের, তেমনি প্রয়োজন বিজ্ঞানের আরো নানা ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞ। তাই আজ অসংখ্য জীববিজ্ঞানী আর পদার্থবিদ, রসায়নবিদ আর ইলেকট্রনিক্স বিশেষজ্ঞ একযোগে কাজ করতে আরম্ভ করেছেন। বায়োনিক্সের রহস্য সন্ধানে নানা ক্ষেত্রের হাজার হাজার বিশেষজ্ঞ আর প্রযুক্তিবিদ গবেষণা চালাচ্ছেন নানা দেশের বহু বিশ্ববিদ্যালয় আর শিল্প গবেষণাগারে।

এসব চেষ্টার ফলে ইতিমধ্যেই জীবজগতের প্রযুক্তিকৌশল কাজে লাগিয়ে নানা আধুনিক যন্ত্রপাতি উদ্ভাবিত হচ্ছে। জেলিফিসের শ্রবণযন্ত্রকে অনুকরণ করে এমন এক যন্ত্র তৈরি করা সম্ভব হয়েছে যার সাহায্যে বায়ুচাপমান যন্ত্রের চাইতে বার চৌদ্দ ঘণ্টার আগে ঝড়ের আগমন সংকেত দেওয়া সম্ভব। ব্যাঙের চোখের কৌশল কাজে লাগিয়ে পৃথিবীর চারপাশে ভ্রমণরত কৃত্রিম উপগ্রহের গতিপথের ওপর স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে নজর রাখার ব্যবস্থা উদ্ভাবিত হয়েছে।

মৌমাছি আর বোলতা চাক তৈরি করে অসংখ্য ছ’দেয়ালের খোপ দিয়ে। এই খোপগুলো আবার সাজানো থাকে সমান্তরাল সারিতে। গণিতবিদরা নিখুঁতভাবে মাপ দিয়ে দেখলেন এসব খোপের তলার দিকে দেয়ালের জোড়ার যতগুলো সূক্ষ্মকোণ তার সবগুলোই ঠিক ৭০ ডিগ্রি ৩২ মিনিট। হিসেব করে দেখা গেল ষটতল কুঠরির ক্ষেত্রে এই কোণ হলেই সবচাইতে কম মালমসলা খরচ করে খোপের আয়তন হয় সব চাইতে বেশি। বহু লক্ষ বছরের বিবর্তনের ধাপ পেরিয়ে মৌমাছি তার অভিজ্ঞতার নিরিখে এই আশ্চর্য দক্ষ আর মিতব্যয়ী কাঠামোর হিসেব আবিষ্কার করেছে। হয়তো মানুষও এই গড়নকে কাজে লাগতে পারে শস্য বা আর কোন জিনিস রাখার কংক্রিটের সংরক্ষণাগার তৈরির জন্য। কাজাখস্থানে প্রযুক্তিবিদরা এমনি গড়নের শস্যাগার তৈরি করে দেখেছেন তাতে প্রচলিত ধরনের শস্যাগারের তুলনায় কংক্রিট লাগে প্রায় ত্রিশ শতাংশ কম আর শ্রমের প্রয়োজন হয় প্রায় অর্ধেক। মৌচাকের খোপের গড়ন অবলম্বন করে আরো নানা ধরনের ঘরবাড়ি তৈরি হতে পারে। 

প্রকৃতিতে এমনি স্থাপত্যের বৈচিত্র্য দেখতে পাওয়া যায় প্রচুর। গাছপালার পাতার তলায় শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য রয়েছে স্টোমা নামে অসংখ্য রন্ধ্র। এগুলোর দু’পাশে থাকে নিয়ন্ত্রণযোগ্য কপাট, তার সাহায্যে প্রয়োজনমতো রন্ধ্রের মুখ বড়-ছোট হয় বা সম্পূর্ণ বন্ধও হয়ে যায়। বাড়িঘরে বা কলকারখানায় বায়ু চলাচলের ভেন্টিলেটরের বদলের দেয়ালের গায়ে এমনি স্টোমার মতো স্বয়ংক্রিয় ভালভ-নিয়ন্ত্রিত রন্ধ্র স্থাপন করার কথা ভাবছেন বিজ্ঞানীরা। এর সাহায্যে দালানের ভেতরকার উষ্ণতা বা আর্দ্রতা বাঞ্ছিত মাত্রায় রাখা সম্ভব হবে। 

প্রযুক্তি নির্ভর জীবপ্রযুক্তির ধারণা কীভাবে বিজ্ঞানীদের মাথায় আসে, প্রযুক্তি নির্ভর, জীবপ্রযুক্তি, বিজ্ঞানী, প্রযুক্তি, জীবজগৎ

প্রথমদিকে যেসব অতি দ্রুতগামী বিমান তৈরি হয় তাদের ডানা হাওয়ার ধাক্কায় কাঁপতে থাকত। ডানার এই কাঁপুনি নিয়ন্ত্রণের কৌশল বের করার জন্য বিজ্ঞানী আর যন্ত্রকুশলীদের কম মাথা ঘামাতে হয়নি। কখনো কখনো প্রবল কাঁপুনির ফলে ডানা ভেঙ্গে পড়ে অনেক বিজ্ঞানীকে প্রাণও দিতে হয়েছে। অবশেষে দেখা গেল ঘাসফড়িং-এর ডানার সামনের দিকে কিছু কিছু পুরু শক্ত এলাকা রয়েছে। আর মানুষ বিমানের ডানার কাঁপুনি নিয়ন্ত্রণের জন্য যে ব্যবস্থা উদ্ভাবন করেছে তার সাথে এদের অবস্থান হুবহু মিলে যায়। অর্থাৎ ঘাসফড়িং-এর ব্যবস্থার কথা আগে থেকে জানতে গেলে মানুষের অনেক পরিশ্রম বেঁচে যেত।

বিজ্ঞানের একটি বিভাগ হিসেবে বায়োনিক্স একেবারে নতুন। কিন্তু ইতিমধ্যে অসংখ্য ক্ষেত্রে তাদের গবেষণার ফলাফল ব্যবহারিক কাজে লাগানো হয়েছে। আরো অসংখ্য ক্ষেত্রে চলছে বিজ্ঞানীদের গবেষণা। জোনাকি পোকা কী কৌশলে জ্বালে তার আশ্চর্য শীতল আলো; দিবা রাত্রির আলো-অন্ধকারের ছন্দ কী প্রভাব বিস্তার করে জীবদেহের ওপর; কবুতর, কুকুর, বেড়াল প্রভৃতি প্রাণী কি করে চিনে নেয় বহু দূরের ঠিকানা; যাযাবর পাখিরা কি কৌশলে হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে প্রতি বছর নির্দিষ্ট সময়ে হাজির হয় একই আস্তানায়; ডলফিন (শুশুক) প্রভৃতি প্রাণী কী ভাষায় কথা বলে পরস্পরের সাথে-এমনি বহু বিষয় নিয়ে আজো বিজ্ঞানীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।

চারপাশের প্রকৃতি মানুষের জন্য জ্ঞানের আর কলাকৌশলের অফুরন্ত ভাণ্ডার - বায়োনিক্স বিজ্ঞানীরা তা যেন মানুষকে আবারও নতুন করে দেখিয়ে দিচ্ছেন। আর এগুচ্ছেন সেসব জ্ঞান আর জীবপ্রযুক্তিকে মানুষের প্রয়োজনে লাগাবার দিকে। প্রযুক্তি নির্ভর বর্তমান বিশ্বকে আরও গতিশীল করতে জীবজগতের প্রাণী সমূহের বিশেষ গুণকে প্রযুক্তি খাতে কাজে লাগাতে সকল বিজ্ঞানীকে একযোগে কাজ করতে হবে।

 

সবার সাথে শেয়ার করুন
এই পোস্টে 0 জন কমেন্ট করেছেন

এডমিশন টিউন কী?