এডমিশন টিউন https://www.admissiontune.com/2021/06/ways-to-stay-healthy-lifetime.html

আজীবন সুস্থ থাকার উপায়

দাঁত শিরশির করে কেন?
কর্মঠ, নিরোগ, আজীবন সুস্থ ও আকর্ষণীয় ফিগারের জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস প্রয়োজন। জীবনে শুধুমাত্র বেঁচে থাকা নয়। দেহের প্রয়োজন বুঝে খাদ্য গ্রহণ এবং খাদ্যে পুষ্টিগুণ নির্ণয় করা উচিত। অন্যথায় শরীরে নানানরকম রোগের সৃষ্টি হয়; যেমন: স্থূলতা, কৃশকা, হাইপারলিপিডেমিয়া যা পুষ্টিবিদদের মতে ডিসলিপিডেমিয়া, হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, কিডনি রোগ, এনিমিয়া, বিভিন্ন ধরনের চোখের রোগ, বেরিবেরি, অস্টিওম্যালেসিয়া ইত্যাদি হতে পারে। আপনি সারা জীবন সুস্থ থাকতে চাইলে ধারাবাহিকভাবে পোস্টটি পড়তে থাকেন। এখানে প্রথমে খাদ্যের সাথে রোগের সম্পর্কে দেখানো হয়েছে এবং পরে কীভাবে সুস্থ থাকা যায় সেটা দেখানো হয়েছে। 
স্থূলতা কি? কেন হয়, বিএমআই নির্ণয় পদ্ধতি, স্থুলতা কেন হয়, স্থূলতা কমানোর উপায়, পুষ্টিহীনতার কারণ, ওজন বৃদ্ধি করার উপায়, ডায়াবেটিস কি-কেন হয়, ডায়াবেটিসের প্রকারভেদ, ইনসুলিন ডায়াবেটিস, ডায়াবেটিসের কারণ, ডায়াবেটিসের লক্ষণ, ডায়াবেটিস শনাক্তের সহজ পরীক্ষা, হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ সমূহ, ডায়াবেটিক কোমা কেন হয়, ডায়াবেটিক কোমার লক্ষণ, ডায়াবেটিক কোমার চিকিৎসা,

স্থূলতা কি? কেন হয়? 

বাংলাদেশে প্রায় ৯০% মানুষ কোনো না কোনো অপুষ্টিতে আক্রান্ত। বিশেষ করে শহরাঞ্চলের মানুষ প্রায় ৮%-১২% স্থূল। স্থূলতা একটি বিপাকীয় রোগ। এক ধরনের অতি পুষ্টিতে সৃষ্ট অপুষ্টি। অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণের ফলে তৈরি ওবেসিটিকে হাইপার প্লাস্টিক ওবেসিটি বলে এবং অ্যাডিপোজ কোষের আকার বড় হওয়ার ওবেসিটিকে হাইপারট্রাফিক ওবেসিটি বলা হয়। এই অ্যাডিপোজ টিস্যুগুলোর বৃদ্ধি যে কোনো বয়সেই হতে পারে। তবে বয়ঃসন্ধিক্ষণে শরীরের ফ্যাটসেলগুলো পূর্ণতা পেতে থাকে। সাধারণত পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের ফ্যাট সেল বেশি এবং ফ্যাটের কারণে ডায়াবেটিসসহ হৃদরোগের সম্ভাবনা বিশেষ করে মহিলাদের মেনোপোজ হওয়ার পর বেশি দেখা যায়।

বিএমআই নির্ণয় পদ্ধতি

স্বাস্থ্য বিশারদদের মতে অতিরিক্ত শারীরিক ওজন হচ্ছে মাংসপেশি, হাড়, চর্বি ইত্যাদি। স্থূলতা পরিমাপ করা যায় কোমর, হিপের পরিমাপ ও বিএমআই নির্ণয়ের মাধ্যমে। বিএমআই (BMI) বা Body Mass Index হচ্ছে দেহের ওজন ও উচ্চতার একটি পরিমাপ। একজন ব্যক্তির সঠিক BMI-এর মান মেয়েদের জন্য ২০-২২ এবং ছেলেদের জন্য ২৩ হলে সেটা স্বাভাবিক ধরা হয়।

BMI = Weight (kg)/Height (M)2 এর উপর ভিত্তি করে স্থূলতাকে নিম্নলিখিত শ্রেণিতে ভাগ করা যায়।

প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য বিএমআই চার্ট:

শরীরের ওজন স্বাভাবিক ওজনের চেয়ে শতকরা ১০-১২% বেশি হলে তাকে অতিরিক্ত ওজন বলা হয়। স্বাভাবিক ওজনের চেয়ে ২০% বেশি হলে তাকে স্থূলতা বলা হয়। এর মধ্যে ওজন, উচ্চতা, বয়স, লিঙ্গ সবকিছুই নির্ভর করে।

স্থুলতা কেন হয়? 

প্রথমত প্রয়োজনের তুলনায় ক্যালরি খরচের তুলনায় গ্রহণ বেশি হলে অতিরিক্ত ক্যালরি শরীরে মেদ হিসাবে জমা হতে থাকে। যা এক পর্যায়ে স্থূলতায় রূপ নেয়। স্থূলতার জন্য যেসব কারণ দায়ী, তা নিম্নরূপ :

১। দেহের চাহিদার তুলনায় বেশি ক্যালরি গ্রহণ

২। বংশগত

৩। পরিবেশগত

৪। মানসিক সমস্যা

৫। ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

৬। নির্দিষ্ট কয়েকটি অপারেশন হলে যেমন: জরায়ুর অপারেশন

৭। অপর্যাপ্ত পরিশ্রম

৮। পারিবারিক ধারা

৯। দৈনন্দিন জীবনধারা বা লাইফস্টাইল

১০। ভুল খাদ্যাভ্যাস

স্থূলতার ফলাফল 

সাধারণতঃ যারা স্থূল তারা নানারকম অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন। যেমন : হাইপারটেশন, ডায়াবেটিস, কার্ডওভাসকুলার ডিজিজ, এন্ডোক্রাইন রোগ, পিত্তথলির রোগ, শ্বাসকষ্ট, আর্থ্রাইটিস এমনকি অকাল মৃত্যুও ডেকে আনতে পারে। অনেক বিশেষজ্ঞ স্থূলতার কারণে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনাও দেখছেন।

স্থূলতা কমানোর উপায়

১। স্থূলতায় দিনে কমপক্ষে ৫ বার ফলমূল এবং শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস রাখা ভালো। এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্যআঁশ থাকে। আঁশযুক্ত খাদ্য দেহের মল নিষ্কাশনের মাধ্যমে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায়। তাই নিয়মিত খাদ্যাভ্যাসে আঁশযুক্ত খাবার যোগ হলে ওজন কমে।

২। লাল মাংস (যেমন : গরু/খাসির মাংস) দিনে একবারের বেশি গ্রহণ না করা। তাতে দেহে চর্বির পরিমাণ বেড়ে যায়। 

৩। অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিডজাত চর্বি খাওয়ার অভ্যাস করা। যেমন : সূর্যমুখী, অলিভ তেল জাতীয় উদ্ভিজ্জ তেল। এ সকল ফ্যাটি এসিড দেহে জমা হয় না।

৪। খাদ্যাভ্যাসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি’ যুক্ত খাবার, যেমন : লেবু, কমলা, আমলকি, পেয়ারা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত রাখা। তাতে ভিটামিন সি’ চর্বি জমা থেকে রেহাই দেয়।

৫। নিজের সাথে অঙ্গীকার করে নিয়মিত সকালে পুষ্টিসম্মত নাস্তা, দুপুরে ও রাতে নিম্ন বা কর্ম চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণে সচেতন হতে হবে। স্ন্যাকস জাতীয় খাবার হিসেবে ভাজা-পোড়াজাত খাবার বর্জন করতে হবে। আবার পুষ্টিযুক্ত স্ন্যাকস যেমন: ঘরে বানানো চিকেন স্যান্ডউইচ দুপুরে বা রাতে খাওয়া যেতে পারে।

৬। সকালের আধা ঘণ্টা ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ বা মুভমেন্ট ওজন কমাতে যথেষ্ট সাহায্য করে এবং সেইসাথে প্রায় ১৬ ঘন্টা পর্যন্ত কর্মক্ষম রাখে।

ওজন কম বা পুষ্টিহীনতা

বাংলাদেশে অপুষ্টিতে আক্রান্ত সংখ্যার কৃশকা বা Thinness অন্যতম। এর ফলে নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি হয়। যেমন: দুর্বলতা, কাজ করার শক্তি হ্রাস পাওয়া, প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস ইত্যাদি। এতে করে দেহের মাংসপেশি ও এডিপোজ টিস্যুর পরিমাণ কমে যায়।

শরীরের স্বাভাবিক ওজনের চেয়ে কম ওজন হলে সাধারণত তাকে কৃশকা বলা হয়। কৃশকা BMI-এর মাধ্যমে নির্ণয় করা যায়। যদি BMI<১৮.৫-র নিচে থাকে তাহলে তাকে ক্ষীণ ওজন বা কৃশকা বলে। অর্থাৎ কেউ আদর্শ ওজন অপেক্ষা ১৫% কম হলে তাকে কৃশকা বলা হয়।

পুষ্টিহীনতার কারণ

১। দেহের চাহিদার তুলনায় খাদ্য গ্রহণে ক্যালরি কম যুক্ত হলে ওজন কমতে থাকে। একইসাথে দেহে পরিশ্রম বৃদ্ধি পেলে দেহে ক্যালরির চাহিদা বৃদ্ধি পায়, ক্যালরির চাহিদা পূরণ না হলে দেহের ওজন ক্রমাগত কমতে থাকে।

২। সাধারণ খাদ্যে পূরণ না হলে থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের নিঃসৃত রসের আধিক্য ঘটে এবং ক্যালরির চাহিদা বৃদ্ধি পায়।

৩।পরিপাকে বিঘ্ন ঘটলে খাদ্য উপাদানগুলো ঠিকমতো শোষিত হয় না। ফলে অশোষিত খাদ্যসমূহ কোনো কাজ করে না।

৪। যক্ষ্ণা বা অন্যান্য ক্ষয়কারী রোগে দেহের ওজন কমে যেতে পারে।

ওজন বৃদ্ধি করার উপায়

১। প্রয়োজনীয় ক্যালরি অপেক্ষা কমপক্ষে অতিরিক্ত ৫০০ কি. ক্যা. যোগ হলে ওজন বাড়তে পারে। শরীরের স্বাভাবিক শক্তির চেয়ে অধিক শক্তি শরীর গ্রহণ করছে কিনা সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

২। পেশি গঠনে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন জাতীয় খাবার যেমন : মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, ডাল, তেল বা ঘি ইত্যাদির প্রয়োজন রয়েছে।

৩। সরল শর্করা জাতীয় খাবার অতিরিক্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন। বিশেষ করে উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত খাদ্য যেমন : আলু, ভাত, আটা, চিনি, মধু ইত্যাদি।

৪। চর্বিজাতীয় খাদ্য যেমন : মাখন, ঘি, তেল, দুধের সর ইত্যাদি। যাদের ওজন কম তারা এগুলো খেতে পারেন। তাছাড়া বিভিন্ন তৈলবীজ যেমন : তিল, বাদাম, আখরোট, পেস্তা, নারকেলেও দেহের ওজন বাড়ায়।

৫। প্রতিদিন বৈচিত্র্যময় খাবার হিসেবে ৬-৬ বার খাওয়ার অভ্যাস রাখা ভালো। অবশ্যই ক্ষুধা লাগার আগেই খেয়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে ৩ ঘন্টা পর পর খাওয়ার অভ্যাস করা, যেন কমপক্ষে ৪ বার ভারি খাবার এবং ৩ বার হালকা খাবারের মধ্যে ক্যালরিযুক্ত খাবার থাকে।

৬। শাকসবজি ও ফল পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে হবে। এতে প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ লবণ থাকে। থায়ামিন বা ভিটামিন বি১ রুচি বাড়ায় ও খাদ্য পরিপাকে সহায়তা করে। তাছাড়া খনিজ লবণ অস্থি মজবুত করে ও লোহিত কণিকার গঠন যথাযথ রাখে।

ক্যালরি কম খরচে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা

ওজন কম থাকলে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে যেন ক্যালরি কম খরচ হয়। কারণ ক্যালরির চাহিদা কমে গেলে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ৫০০ কি. ক্যালরি গ্রহণ করে তখন খুব সহজে ওজন বাড়ানো সম্ভব।

১। যে কোনো ভারি কাজ ৪৫-৬০ মিনিটের মধ্যে শেষ করা।

২। ভারি কাজ শেষে ৯০ সে. বিশ্রাম নেয়া।

৩। বিশ্রাম ও ঘুমের সময় বাড়ানো। 

সপ্তাহের সাতদিনে কিছু ব্যায়াম ভাগ করে নিতে হবে। যাদের বিপাক ক্রিয়ার হার বেশি তাদের অনেক কম সময়ের মধ্যে দ্রুত কাজ শেষ করতে হবে। যেমন:

প্রথম দিন – বুকের, ঘাড়ের, ট্রাইসেপসের ব্যায়াম

দ্বিতীয় দিন – বিশ্রাম

তৃতীয় দিন – পিছন এবং বাইসেপসের ব্যায়াম

চতুর্থ দিন – বিশ্রাম

পঞ্চম দিন – পা এবং নি:শ্বাসের ব্যায়াম

ষষ্ঠ দিন – বিশ্রাম

সপ্তম দিন – বিশ্রাম।

অর্থাৎ সপ্তাহে ৩ দিন ব্যায়াম করতে হবে। তবে নিঃশ্বাসের ব্যায়াম প্রতিদিন করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

ডায়াবেটিস কি? কেন হয়?

স্থূলতা কি? কেন হয়, বিএমআই নির্ণয় পদ্ধতি, স্থুলতা কেন হয়, স্থূলতা কমানোর উপায়, পুষ্টিহীনতার কারণ, ওজন বৃদ্ধি করার উপায়, ডায়াবেটিস কি-কেন হয়, ডায়াবেটিসের প্রকারভেদ, ইনসুলিন ডায়াবেটিস, ডায়াবেটিসের কারণ, ডায়াবেটিসের লক্ষণ, ডায়াবেটিস শনাক্তের সহজ পরীক্ষা, হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ সমূহ, ডায়াবেটিক কোমা কেন হয়, ডায়াবেটিক কোমার লক্ষণ, ডায়াবেটিক কোমার চিকিৎসা,

সারা বিশ্বেই ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা এখন অনেক বেশি। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে আমাদের দেশের পার্থক্য রয়েছে। অন্যান্য দেশের ডায়াবেটিস রোগী স্বাভাবিক, প্রাণবন্ত ও সুস্থভাবেই দীর্ঘজীবন অতিবাহিত করছেন। অথচ আমাদের দেশে দেখা যায় উল্টো। যেমন: প্রথম অবস্থায় একজন ডায়াবেটিস রোগীকে দেখলে বোঝা যায়, অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞার ফলে সম্পূর্ণ খাদ্যভ্যাসই পরিবর্তন হয়ে গেছে এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস না থাকার ফলে খুব অল্পদিনের মধ্যেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। কিন্তু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত যে কেউ একটু সচেতন হলেই এই সমস্ত রোগ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন।

বর্তমানে আমাদের দেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ডায়াবেটিস সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী প্রায় ৬.২৫ মিলিয়ন মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এর মধ্যে ৩ কোটি চিকিৎসার আওতায় আছে। যে কোনো বয়সে এর প্রাদুর্ভাব বিস্তার করছে। তবে মধ্য বয়সেই এর প্রকোপ বেশি ধরা পড়ছে। আবার ডায়াবেটিস রোগ একটি বিপাকীয় রোগ।

মানবদেহের একটি অঙ্গের নাম অগ্নাশয়। সেখানে ৩ ধরনের কোষ থেকে ৩ ধরনের হরমোন নির্গত হয়্ ১. আলফা কোষ (নির্গত হরমোন গ্লুকাগন) ২. বিটা কোষ (নির্গত হরমোন ইনসুলিন) ৩. ডেলটা কোষ (নির্গত হরমোন সুমাটোস্ট্যাটিন)। নির্গত হরমোনগুলোর কাজ একেকটি থেকে আরেকটি ভিন্ন। যেমন : গ্লুকাগন রক্তে গ্লুকোজ লেবেলকে বাড়ায়, ইনসুলিন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমায়, সুমাটোস্ট্যাটিন রক্ত গ্লুকোজকে নিরপেক্ষ রাখে। যে কোনো বিপাকীয় ত্রুটির কারণে যখনই ইনসুলিনের ক্ষরণ কম হয় তখনই রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে।

রক্তে গ্লুকোজের একটি স্বাভাবিক মাত্রা আছে। ৮০-১২০ মি.গ্রা./ ডি এল অথবা <৭.০০ মি. মোল/লিটার। ইনসুলিনের প্রধান কাজই হলো রক্তের অতিরিক্ত গ্লুকোজকে কোষে পৌছে দেয়া।

ডায়াবেটিসের প্রকারভেদ

ডায়াবেটিস মুলত : ২ প্রকার। যথা : ১) টাইপ-১ বা ইনসুলিন নির্ভর ডায়াবেটিস, ২) টাইপ-২ বা ইনসুলিন অনির্ভর ডায়াবেটিস।

ইনসুলিন নির্ভর ডায়াবেটিস

খাদ্যদ্রব্য পরিপাকের সময় শর্করাজাতীয় খাদ্যকে গ্লুকোজে পরিণত করে কোষের ভিতরে প্রবেশ করে কর্মশক্তি উৎপন্ন করে। কোনো কারণে যখন ইনসুলিনের ক্ষরণ কমে যায় তখন গ্লুকোজ কোষে না গিয়ে সরাসরি রক্তে থেকে যায়। ডায়াবেটিসের এই অবস্থাকে ইনসুলিন নির্ভর বা টাইপ-১ ডায়াবেটিস বলে। ছেলেদের ডায়াবেটিস অর্থাৎ জুভেনাইল ডায়াবেটিসও টাইপ-১ ডায়াবেটিসের অন্তর্গত।

ইনসুলিন অনির্ভর ডায়াবেটিস

এই ধরনের ডায়াবেটিস মূলত মধ্যবয়স থেকে শুরু হয়। এ অবস্থায় দেহের সাধারণ জ্বালানি গ্লুকোজের পরিবর্তে ফ্যাট ভেঙে কিটোন বডি তৈরি হয়। ফলে ইনসুলিনের ক্ষরণ ঠিকমতো হয় না। এ অবস্থাটা অনেকদিন স্থায়ী হলে মারাত্মক হয়। তবে এটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য। দ্রুত নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিলে ডায়াবেটিস থেকে সংঘটিত অন্যান্য রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। স্থূলতা থেকেও টাইপ-২ ডায়াবেটিস হতে পারে।

ডায়াবেটিসের কারণ

টাইপ-১ ডায়াবেটিস সাধারণত অগ্নাশয়ের বিটা সেল ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে ইনসুলিন প্রস্তুত হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ইনসুলিনের অভাব ঘটে। এতে করে ইনসুলিন রক্তের গ্লুকোজকে কাজে লাগাতে পারে না এবং ডায়াবেটিস দেখা দেয়। ডায়াবেটিস হওয়ার পেছনে ৩টি কারণকে বেশি দায়ী করা হয়—

১। বংশগত - ডায়াবেটিসে আক্রান্ত পিতামাতার সন্তানদের ডায়াবেটিস হবার সম্ভাবনা অন্যান্যদের চেয়ে অনেক বেশি। বংশগত কারণেও ডায়াবেটিস হয়।

২। খাদ্যঘটিত কারণ - অধিকাংশ বয়স্ক স্থূল ব্যক্তিই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। স্থূলতা ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা হ্রাস করে ফেলে। ফলে ডায়াবেটিস হয়। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, ডায়াবেটিক রোগীদের মধ্যে ৭৫% স্থূল। কারোর ওজন আদর্শ ওজনের চেয়ে ৫০% বেশি হলে তার ডায়াবেটিস হবার সম্ভাবনা ১২ গুণ বেড়ে যায়। এছাড়া কম আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণেও ডায়াবেটিসের প্রবণতা বেড়ে যায়। সম্প্রতি কিছু গবেষণায় দেখা গেছে অধিক আঁশযুক্ত খাদ্য গ্রহণ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

৩। সংক্রামক রোগ - কোনো কোনো সংক্রামক রোগ ডায়াবেটিসকে সুপ্তাবস্থা হতে প্রকাশ্যে নিয়ে আসে। কারণ কিছু ভাইরাস সংক্রমণে অল্প বয়স্কদের মধ্যেও ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা দেখা দেয়।

৪। শারীরিক আঘাত, অপারেশন ও মানসিক চাপ হতেও অনেক সময় প্রি-ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিসের সূত্রপাত হয়।

৫। গর্ভাবস্থায় সাময়িকভাবে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে তাকে জেসটেশনাল ডায়াবেটিস বলা হয়।

৬। হেপাটাইটিস, সিরোসিস ইত্যাদি যকৃতের রোগেও ডায়াবেটিস হতে পারে।

৭। স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধের কারণে এবং অনেকদিন যাবৎ কার্টিসেল জাতীয় ঔষধ সেবন করলেও এই রোগ দেখা দেয়।

৮। তাছাড়া যাদের শারীরিক পরিশ্রমের সুযোগ কম, অফিসে বসা কাজ করেন অথবা দিনের বেশির ভাগ সময় লেখা-পড়ায় কাটে, তাদের মধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায় এমনকি নির্দিষ্ট কায়িক পরিশ্রমের অভাবেও ডায়াবেটিস হতে পারে।

ডায়াবেটিসের লক্ষণ 

যেসব লক্ষণ দেখলে খুব সহজেই ডায়াবেটিস নিরূপণ করা যায়, সেগুলো হলো–

১। পিপাসা বেড়ে যাওয়া

২। বার বার প্রশ্রাব

৩। অধিক ক্ষুধা

৪। হঠাৎ করে শারীরিক ওজন-হ্রাস পেতে থাকা

৫। অত্যধিক দুর্বলতা ও ক্লান্তি

৬। চর্মরোগ

মেয়েদের ক্ষেত্রে

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস থাকলে–

১। বেশি ওজনের শিশু জন্মায়

২। মৃত শিশুর জন্ম

৩ অকালে সন্তান প্রসব

৪। শিশু জন্মের সাথে সাথে মৃত্যু

৫। জন্মগত ত্রুটি ইত্যাদি। 

ডায়াবেটিস শনাক্তের সহজ পরীক্ষা 

ডায়াবেটিস আছে কিনা তা জানার জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পরীক্ষাহলো গ্লকোজ সহনশীলতা পরীক্ষা। বর্তমানে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে সকালে খালি পেটে (Fasting Blood Glucose) একবার রক্ত পরীক্ষা করা হয়। এরপর নাস্তা করার দু’ঘন্টা পর (2 hours postprandial) আবার রক্ত পরীক্ষা করা হয়।

জরুরী অবস্থা

হাইপোগ্লাইসেমিয়া ও ডায়াবেটিক কোমা এ দুটি অবস্থার জন্য ডায়াবেটিস রোগীর বিশেষ যত্ন নিতে হবে এবং নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করতে হবে।

হাইপোগ্লাইসেমিয়া একটি নীরব ঘাতক

রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ যদি ২.৮ মি.মোল/লিটার বা তার চেয়ে কমে যায় তাহলে দেহে যে অবস্থার সৃষ্টি হয় তাকে হইপোগ্লাইসেমিয়া বলে। 

হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ সমূহ

১। হঠাৎ খুব বেশি দুর্বলবোধ করা

২। অতিরিক্ত ঘাম হওয়া

৩। হঠাৎ হৃদপিণ্ডের স্পন্দন বেড়ে যাওয়া

৪। চোখে ঝাপসা দেখা

৫। দেহের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা

৬। অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।

হাইপোগ্লাইসেমিয়ার চিকিৎসা

যদি কোনো কারণে ডায়াবেটিস রোগীদের হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয়, তাহলে সাথে সাথে গ্লুকোজ চেক করতে হবে।

এক্ষেত্রে নিম্নে যে কোনো একটি খেয়ে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়াতে পারেন—

১। ২-৩ টা গ্লুকোজ ট্যাবলেট

২। মেজারিং কাপের আধা কাপ (৪ আউন্স) ফলের রস

৩। আধা কাপ (৪ আউন্স) কোমল পানীয়

৪। ১ কাপ (৮ আউন্স) দুধ

৫। ৫-৬ টা ক্যান্ডি

৬। ১-২ চা.চা. চিনি বা মধু খাওয়া। এর যে কোনো একটি গ্রহণ করলেই রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। ১৫মি. একইভাবে থেকে এর পর রক্তের গ্লুকোজ চেক করতে হবে।

ডায়াবেটিক কোমা

যেসব রোগী ইনসুলিন নেন তাদেরই ডায়াবেটিক কোমা হয়ে থাকে। অপর্যাপ্ত ইনসুলিন নিলে রক্তে শর্করার পরিমাণ খুব বেড়ে যায়। ফলে রোগী কোমায় চলে যায়। ইনসুলিনের অভাবে রক্তের গ্লুকোজকে কাজে লাগাতে পারে না, ফলে দেহে শক্তি সরবরাহ করার জন্য জমাকৃত চর্বির উপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু জমাকৃত চর্বি যথাযথভাবে ব্যবহার না করতে পারার ফলে কিটোন জাতীয় পদার্থ প্রসাবের সাথে বের হতে থাকে এবং এর মাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকলে রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়। এ অবস্থাকে ডায়াবেটিক কোমা বলা হয়।

ডায়াবেটিক কোমা কেন হয়? 

১। পরিশ্রম কম করলে

২। নির্দেশকৃত মাত্রার কম ইনসুলিন গ্রহণ করলে 

৩। ঔষধ খেতে ভুলে গেলে

৪। সংক্রামক রোগ বা মানসিক বিপর্যয় ঘটলে

ডায়াবেটিক কোমার লক্ষণ

প্রসাবে শর্করার পরিমাণ অত্যধিক বেড়ে যাওয়া

১। অত্যধিক পিপাসা

২। ঘন ঘন প্রস্রাব

৩। দুর্বলতা

৪। ঝিমানো বা ঘুম ঘুম ভাব

৫। শ্বাসকষ্ট, ঝাপসা দেখা ইত্যাদি।

ডায়াবেটিক কোমার চিকিৎসা 

১। দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া

২। প্রস্রাবের এসিটোনের পরিমাণ পরীক্ষা করা

৩। রোগীকে বিছানায় শুইয়ে রাখা 

সারাংশঃ রোগমুক্ত ও আজীবন সুস্থ থাকতে চাইলে আপনাকে উপরক্ত নিয়মগুলো মানার পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক চলতে হবে। আর রোগাক্রান্ত হলে অবশ্যই একজন ভালো চিকিৎসকের কাছে যাবেন নতুবা সারা জীবন সুস্থ থাকতে হলে ওষুধ ছাড়া অন্য বিকল্প থাকবে না। আমরা ধারাবাহিকভাবে নীরোগ জীবনযাপনের টিপস দিয়ে যাবো। আমাদের লেখাটি আপনার ভালো লেগে থাকলে কমেন্ট করতে ভুলবেন না। 

সবার সাথে শেয়ার করুন
এই পোস্টে 2 জন কমেন্ট করেছেন
  1. অনেক ধন্যবাদ। ডায়াবেটিস নিয়ে বিস্তারিত লেখা চাই।

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. আপনাকে ধন্যবাদ ভাইয়া। সামনে বিস্তারিত লেখা আসবে।

      মুছুন

এডমিশন টিউন কী?