এডমিশন টিউন https://www.admissiontune.com/2021/06/how-do-telescope-work.html

দূরবীন দিয়ে মহাকাশ পর্যালোচনা

দূরবীন নামটির সাথে তোমরা সকলেই কমবেশি পরিচিত। মেলায় গিয়ে দূরবীন কেনা একসময় বাচ্চাদের শখে পরিণত হয়েছিল। অনেক অনেক আগের কথা ১৬০৯ সালে বিজ্ঞানী গ্যালিলিও সর্বপ্রথম এই দূরবীন দিয়ে মহাকাশ পর্যবেক্ষণ করেন। বিজ্ঞানী গ্যালিলিও চাঁদের গায়ের খাদ পর্যবেক্ষণ করেন যে দূরবীন দিয়ে তার চোখ চওড়ায় ছিল মাত্র এক ইঞ্চি। উনিশ শতকের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে বিশ শতকের শুরুর দিকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় চালু দূরবীন ছিল ক্যালিফোর্নিয়ার মাউন্ট পালোমার-এ; যা ছিল হেল (Hale) দূরবীন নামে পরিচিত ছিল। দূরবীন মূলত দূরের জিনিস দেখতে সাহায্য করে তাছাড়া মহাকাশ গবেষণা ও বিভিন্ন গ্রহ-উপগ্রহ পর্যবেক্ষণে এটি বিজ্ঞানীদেরকে ব্যাপক সাহায্য করেছে। আমরা এখন কিছু বিখ্যাত দূরবীন সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো।  
দূরবীন কীভাবে কাজ করে, দূরবীন, গ্যালিলিও, দূরবীন এর দাম, দূরবীন যন্ত্রের দাম, দূরবীন যন্ত্র, অনলাইন দূরবীন, দূরবীন আবিষ্কার করেন কে, দূরবীন আবিষ্কারক, দূরবীন যন্ত্র কে আবিষ্কার করেন, গ্যালিলিও কি, গ্যালিলিও কেন বিখ্যাত, গ্যালিলিও গ্যালিলি, গ্যালিলিও অবদান

পৃথিবীর কয়েকটি বড় আকারের দূরবীন

    • প্রতিফলন দূরবীন
      • কেক দূরবীন, মাউনা কিয়া, হাওয়াই - ৩৮৭ ইঞ্চি, জেলেনচুকস্কায়া (রাশিয়া) - ২৩৬ ইঞ্চি, পালোমার, ক্যালিফোর্নিয়া (হেলপ্রতিফলক), ১৯৪৮ - ২০০ ইঞ্চি, লা পালামা, ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জ (উইলিয়াম হার্শেল প্রতিফলক) - ১৬৫ ইঞ্চি, সেরো তলোলো, চিলি - ১৫৮ ইঞ্চি, কিট পীক, অ্যারিজোনা - ১৫৮ ইঞ্চি, লা সিলা, চিলি - ১৫৮ ইঞ্চি, লা সিলা, চিলি (নতুন প্রযুক্তি দূরবীন) - ১৫৮ ইঞ্চি, সাইডিং স্প্রিং, অস্ট্রেলিয়া (ব্রিটিশ-অস্ট্রেলিয়া দূরবীন) - ১৫৩ ইঞ্চি, মাউণ্ট স্ট্রমলো, ক্যানবেরা, অস্টেলিয়া - ১৫০ ইঞ্চি, মাউনা কিয়া, হাওয়াই (ব্রিটিশ অবলাল রশ্মি দূরবীন) - ১৫০ ইঞ্চি, মাউনা কিয়া, হাওয়াই (কানাডা ফ্রান্স হাওয়াই দূরবীন) - ১৪৩ ইঞ্চি
    • প্রতিসরক দূরবীন
      • ইয়ের্কস্, উইলিয়মস বে, আমেরিকা - ৪০ ইঞ্চি, লিক, ক্যালিফোর্নিয়া - ৩৬ ইঞ্চি

এই শতাব্দীর বিশের দশকে মানুষ প্রথম জানতে পেরেছে আমাদের সৌরজগৎ মহাবিশ্বে নিঃসঙ্গ নয়, আসলে এটা ছায়াপথ গ্যালাক্সির অংশ। এই ছায়াপথ গ্যালাক্সি সূর্যের মতো প্রায় ৪০,০০০ কোটি তারার বিশাল এক পুঞ্জ বুকে নিয়ে গাড়ির চাকার মতো ক্রমাগত নিজ কেন্দ্রের চারপাশে ঘুরছে। সূর্য আছে এক লক্ষ আলোক-বছর চওড়া এই চাকার কিছুটা কিনার ঘেঁষে─ কেন্দ্র থেকে মোটামুটি ৩০,০০০ আলোক-বছর দূরে। আমাদের সূর্য আর এর কাছাকাছি অন্য নক্ষত্ররা ঘণ্টায় প্রায় ৮০০,০০০ কিলোমিটার বেগে ছুটে প্রায় ২৫ কোটি বছরের একবার এই গ্যালাক্সি-চাকার চারপাশ ঘুরে আসছে।

এই ছায়াপথই যে পুরো মহাবিশ্ব নয়, বরং মহাবিশ্বে আছে ছায়াপথের মতো আরো অসংখ্য গ্যালাক্সি - একথা জানা গেছে আরো অনেক পরে। আজ আমরা জানি, আমাদের গ্যালাক্সির আশপাশে শ’খানেক গ্যালাক্সি মিলে তৈরি হয়েছে গ্যালাক্সির এক ‘স্থানীয় দল’; এই দলে আমাদের এক কাছাকাছি সদস্য হল ২৩ লক্ষ্ আলোক-বছর দূরে অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি। রাতের আকাশে একে পৃথিবী থেকে খালি চোখেই দেখতে পাওয়া যায়। এই অ্যাণ্ড্রোমিডার যে আলো আমরা আজ দেখতে পাচ্ছি তা যখন সেখান থেকে রওনা দিয়েছিল তখন আফ্রিকার বুক থেকে মানব প্রজাতি কেবল হাঁটি হাঁটি পা পা করে পৃথিবীর নানা দিকে অভিযাত্রা শুরু করেছে। আমাদের স্থানীয় দল থেকে বহু দূরে রয়েছে একটি বিশাল গ্যালাক্সি দল; তার নাম কন্যা স্তবক (Virgo Cluster)। এটি আছে প্রায় পাঁচ কোটি আলোক-বছর দূরে; আর এর সদস্য সংখ্যা প্রায় ২৫০০।

আরও পড়তে পারেনঃ কিভাবে অনলাইনে ইনকাম করা যায়

                               Prize Bond চেকার অ্যাপ ছাড়াই কীভাবে ফল মিলাবেন

                               মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে

বিজ্ঞানীরা আজ দূরবীন দিয়ে দেখছেন, আমাদের থেকে দূরের কিছু গ্যালাক্সি কাছাকাছি অন্য গ্যালাক্সিকে যেন গিলে খাচ্ছে। হয়তো আমাদের গ্যালাক্সিও এমনি কাছের অন্য গ্যালাক্সিদের গিলে খাবার উপক্রম করছে। আর এক আশ্চর্য নতুন আবিষ্কার হল আমাদের গ্যালাক্সি এবং কাছাকাছি অন্য গ্যালাক্সিরা যেন কোন অদৃশ্য শক্তির টানে আরো দূরের কোন গন্তব্যের দিকে বিপুল বেগে ছুটে চলেছে। সে টানের উৎসটা এখনও খুঁজে পাওয়া যায় নি; তবে এটা বোঝা গেছে যে, তার ভর হবে অন্তত ২০০ কোটি কোটি (২-এর পর ১৬টি শূন্য) সূর্যের সমান।

নতুন ধরনের নানা দূরবীন দ্বারা আমাদের গ্যালাক্সির ভেতরের ঘন নক্ষত্রসমাবেশের ধোঁয়াটে এলাকার দিকে আজ বিজ্ঞানীরা দৃষ্টি দিতে পারছেন। মনে হচ্ছে সেখানে এক বিশাল কৃষ্ণবিবর ঘুরপাক খাচ্ছে। আবার গ্যালাক্সির সমাবেশ দেখা যাচ্ছে মোটেই সুষম নয়, কিছু বিশাল রকম ফাঁকা জায়গা রয়েছে যেখানে তেমন কোন বস্তু নেই। গ্যালাক্সিরা মহাকাশে সমানভাবে না ছড়িয়ে এমন বিশাল সব ফাঁকা জায়গায় কেন তৈরি হল তার এখনও হদিস মেলে নি। আরো গভীর রহস্য সৃষ্টি হয়েছে অদৃশ্য বস্তু নিয়ে; যেন গ্যালাক্সিগুলোর চারপাশে রয়েছে বিশাল সব অদৃশ্য বস্তুর চক্র। মনে হচ্ছে মহাবিশ্বের মাত্র শতকরা একভাগ বস্তু এযাবৎ মানুষের হিসেবের মধ্যে এসেছে, বাকি ৯৯ ভাগই অদৃশ্য বস্তু, সেগুলো এখনও রয়েছে মানুষের দৃষ্টিসীমার বাইরে।

দূরবীনঃ অদৃশ্য রশ্মির জগৎ

দূরবীন কীভাবে কাজ করে, দূরবীন, গ্যালিলিও, দূরবীন এর দাম, দূরবীন যন্ত্রের দাম, দূরবীন যন্ত্র, অনলাইন দূরবীন, দূরবীন আবিষ্কার করেন কে, দূরবীন আবিষ্কারক, দূরবীন যন্ত্র কে আবিষ্কার করেন, গ্যালিলিও কি, গ্যালিলিও কেন বিখ্যাত, গ্যালিলিও গ্যালিলি, গ্যালিলিও অবদান

আকাশে আমরা যেসব তারা দেখি সেগুলো আসলে ছায়াপথ গ্যালাক্সি নামে যে তারাপুঞ্জে আমাদের সূর্য রয়েছে তারই অংশ। আগেই বলেছি, আমাদের এই তারাপুঞ্জে আছে প্রায় ৪০,০০০ কোটি তারা। আর মহাবিশ্বে এমনি তারাপুঞ্জ বা গ্যালাক্সি আছে অন্তত ১০,০০০ কোটি। তাহলে মহাবিশ্বের মোট তারার সংখ্যা কত সেটা হিসেবে পটু পাঠকদের জন্য একটা চমৎকার ধাঁধা হতে পারে। আমাদের এই মহাবিশ্ব আজ এমন বড় হয়ে উঠেছে যে, এর দূরত্ব হিসেব করা হয় আলোর বেগ দিয়ে। আলো প্রতি সেকেণ্ডে যায় মোটামুটি তিন লক্ষ কিলোমিটার; অর্থাৎ বছরে প্রায় সাড়ে ন’লক্ষ কোটি কিলোমিটার। এই দূরত্বকে বলা হয় এক আলোক-বছর।

এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি কিভাবে হল তাও বিজ্ঞানীরা হিসেব করে বের করেছেন। তাদের হিসেব অনুযায়ী মহাবিশ্বের শুরু আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার কোটি বছর আগে; তখন একটা পরমাণুর চেয়েও বহু লক্ষগুণ ছোটএক বিপুল শক্তিধর বিশ্বডিম্ব থেকে যাত্রা শুরু হয়েছিল এ মহাবিশ্বের। এই অতি উত্তপ্ত বিশ্বডিম্ব অকস্মাৎ প্রবলভাবে প্রসারিত হতে আরম্ভ করে আর এই বিস্তারের ফলে সেটা ক্রমে ক্রমে ঠাণ্ডা হয়; তা থেকে বস্তুকণা রূপ পেতে থাকে - সৃষ্টি হয় আদি বস্তুকণা হাইড্রোজেন আর হিলিয়ামের উপাদান। এসব বস্তু শেষ পর্যন্ত জোট বেঁধে তৈরি হয়েছে গ্যালাক্সিগুলো আর তার ভেতরে সৃষ্টি হয়েছে তারাদের।

এই যে তারার দল তার মধ্যে আছে আবার নোভা (Nova) বা নবতারা; এমনি নবতারা অকস্মাৎ আকাশে দপ করে জ্বলে ওঠে আর দেখা যায় বেশ কিছুদিন ধরে। বিজ্ঞানীরা আজ জানতে পেরেছেন, আমাদের সূর্য এক লাখ বছরে যত শক্তি বিলায় একটি নবতারা মাত্র এক বছরে বিলিয়ে দিতে পারে ততখানি শক্তি। তারার অন্তিম সময়ে একটি তারা পরিণত হতে পারে সুপারনোভা (Supernova) বা অতিনবতারায়; তখন প্রচণ্ড বিস্ফোরণে তারার বস্তু প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। আর এ অবস্থায় তার তেজের বিকিরণ বেড়ে উঠতে পারে দশ লক্ষগুণ বেশি। শক্তিশালী দূরবীন দিয়ে বিজ্ঞানীরা আমাদের গ্যালাক্সিতে প্রতি বছরই দু’চারটি করে নবতারার হদিস পাচ্ছেন। তার চেয়ে অনেক বেশি অবশ্য আমাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যাচ্ছে। এছাড়া মহাকাশের অতি দূর এলাকায় আছে রহস্যময় কোয়াসার (Quasar) বা নক্ষত্রসদৃশ বস্তুরা; তাদের একেকটি যে পরিমাণ তেজ বিকিরণ করে তা কয়েক হাজার গ্যালাক্সির সমান।

মহাবিশ্ব দিয়ে যে নিরন্তর বিপুল শক্তির আনাগোনা তার বেশির ভাগ মানুষের চোখে আদৌ ধরা পড়ে না; তার কারণ সে তেজের বিকিরণ ঘটে মানুষের চোখে অদৃশ্য নানা রকম রশ্মির আকারে। যেমন তরুণ বয়সী অতি উত্তপ্ত নবতারা তার শক্তি বিলায় প্রধানত অতিবেগুনি, এক্স-রশ্মি আর গামারশ্মির আকারে। অপেক্ষাকৃত শীতল, অদৃশ্য বস্তুরা সাধারণত তাদের তেজ বিকিরণ করে অবলাল রশ্মিতে। বেতার তরঙ্গ - যাতে তেজ থাকে সবচেয়ে কম - সৃষ্টি হয় অতিমাত্রায় বিক্ষোভময়, সংঘাতশীল তারাদের গা থেকে; সেসব তরঙ্গও মানুষের চোখে কোন সাড়া জাগায় না। আজ বিজ্ঞানীরা বিশেষ ধরনের দূরবীন ব্যবহার করে - বিশেষ করে মহাকাশে বসানো নভোযানের সাহায্যে - এসব অদৃশ্য রশ্মির আশ্চর্য এক নতুন জগতের হদিস করতে পারছেন।

দূরবীন দিয়ে মহাকাশের তারাদের পৃথিবী থেকে দেখতে যত কাছাকাছিই মনে হোক আসলে তাদের পরস্পরের মধ্যে রয়েছে বহু আলোক বছরের ব্যবধান। তাতে মনে হতে পারে মহাবিশ্বের বেশির ভাগ ফাঁকা জায়গা বুঝি অতি শীতল আর নিস্তরঙ্গ। কিন্তু আসলে সারা মহাকাশ জুড়ে চলেছে শক্তির বিপুল দাপাদাপি; নক্ষত্রের বিস্ফোরণ থেকে ক্রমাগত ছিটকে উঠছে বিপুল পরিমাণ বস্তুরাশি। কোথাও ছত্রখান হয়ে বিস্ফোরিত হচ্ছে কোন তারা; তাতে চারপাশে ঘাত-তরঙ্গ ছুটছে বিপুল বেগে আর মহাকাশের আন্তঃনাক্ষত্র গ্যাস তেতে উঠছে বহু লক্ষ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়। দূরবীন মহাকাশের প্রতি আমাদের গবেষণাকে কত সহজ করে দিয়েছে! 

সবার সাথে শেয়ার করুন
এই পোস্টে 0 জন কমেন্ট করেছেন

এডমিশন টিউন কী?