৪৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি [সিক্রেট ফাঁস]
বিসিএস প্রস্তুতি সবাই নিলেও খুব কম মানুষ সফল হয় কেন জানেন? বিসিএস প্রস্তুতি নেওয়া মানে এটা নয় যে আপনি বিসিএস ক্যাডারই হবেন। অনেকে বিসিএস প্রস্তুতি নিয়ে অন্যান্য সরকারি, বেসরকারি চাকুরি বা শিক্ষকাতায় যুক্ত হতে পারে।
আমাদের দেশে প্রচলিত আছে মুদ্রা আর রাজধানীর নাম মুখস্ত করলেই বিসিএস প্রস্তুতি হয়ে যায় তথা বিসিএস ক্যাডাররা এভাবে চাকুরি পায়। আসলে সে সকল মানুষজন জানেন তাদের পক্ষে বিসিএস প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব না।
তাই নিজের অযোগ্যতাকে আড়াল করতে তারা এই জাতীয় কথা বলে থাকেন। বিসিএস প্রস্তুতি নিতে হলে আপনাকে প্রচুর পড়তে হবে এবং সঠিক গাইডলাইন ফলো করতে হবে। বিসিএসে টিকে থাকে তারাই যারা কৌশলী ও পরিশ্রমী।
আপনি যেহেতু এই পোস্টটি পড়তে এসেছেন ফলে ধরে নেওয়া যায় আপনি বিসিএস প্রস্তুতি নিচ্ছেন বা নিবেন। আপনার উদ্দেশ্য প্রমাণ করে আপনি স্মার্ট এবং একজন দেশপ্রেমিক নাগরিক হতে চান! তাহলে যারা বিসিএস ক্যাডার না তারা কি দেশপ্রেমিক না?
আমি মোটেও এমন বুঝাইনি। তবে একজন বিসিএস ক্যাডার সরকারের অংশ হিসেবে সরাসরি দেশের স্বার্থে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার সুযোগ পায়। একটি দেশের কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে তাঁদের ভূমিকা নেই। ফলে বুঝতেই পারছেন বিসিএস প্রস্তুতি নেওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ আর সফল হলে সেটা খুবই সম্মানজনক।
বিসিএস কি?
BCS এর পূর্ণ রূপ হচ্ছে Bangladesh Civil Service, যেখানে ক্যাডার কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করার জন্য যে পরীক্ষা দিতে হয় সেটাই আসলে বিসিএস পরীক্ষা। একটা দেশের সরকারি চাকরিকে আমরা প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করতে পারি, একটা হলো সামরিক বা মিলিটারি সার্ভিস, আরেকটা হলো বেসামরিক বা সিভিল সার্ভিস।
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (BPSC) গেজেট প্রকাশ করে ক্যাডার হিসেবে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে নিয়োগ দেয়ার জন্য যে পরীক্ষা গ্রহণ করে সেটাই হলো বিসিএস পরীক্ষা।
ক্যাডার এর অর্থ হচ্ছে কিছু লোককে নিয়ে গঠিত একটা দল, যাদেরকে একটা বিশেষ কার্য সম্পাদনের জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। সরকারি কর্ম কমিশন একটি স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা, যার দায়িত্ব সরকারি চাকরিতে নিয়োগ সংক্রান্ত দায়িত্ব পালন করা। এটিকে ইংরেজিতে পাবলিক সার্ভিস কমিশন হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
এটি একটি সাংবিধানিক ও স্বাধীন সংস্থা। একজন চেয়ারম্যান এবং কয়েকজন সদস্য সমন্বয়ে পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য কমিশন গঠিত হয়। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি কমিশনের চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের নিয়োগ প্রদান করেন। বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তা হিসেবে সাধারণত দুই ধরনের ক্যাডার পদে নিয়োগ দেয়া হয়। একটি হচ্ছে ‘সাধারণ ক্যাডার’ এবং অন্যটি ‘কারিগরি বা পেশাগত ক্যাডার’ পদ।
যাইহোক, আশাহত হওয়া যাবে না এবং অসহায় বোধ করবেন না। আপনি সঠিকভাবে বিসিএস প্রস্তুতি নিতে চাইলে এই গাইডলাইনগুলো খুব ভালোভাবে ফলো করবেন।
১. আজকেই শুরু করুন বিসিএস প্রস্তুতি
বিসিএস প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করবেন নাকি একাডেমিক পড়াশোনায় মনযোগ দিবেন এমন দ্বিধায় থাকা যাবে না। আপনার একাডেমিক পড়ার চাপ কম থাকলে অবশ্যই বিসিএস প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করবেন।
তবে এই পরামর্শ শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য। নিজেকে কখনও দুর্বল মনে করা যাবে না। মনে রাখবেন যারা বিসিএস ক্যাডার হিসেবে নিয়োগ পান তারা আপনার চেয়ে ভালো মানের শিক্ষার্থী ছিল না।
৮০% বিসিএস ক্যাডারই তাদের একাডেমিক পর্যায়ে খুব ভালো ফলাফল করেন না। কিন্তু তারা সফল হয় কারণ প্রত্যেকেই প্রচণ্ড পরিশ্রমী হয়ে থাকেন। বিসিএস পরীক্ষা শুধুমাত্র মেধাবীদের জন্য না বরং যারা পরিশ্রমী ও সিরিয়াস থাকেন তারাই সফল হয়। আপনি আজকে থেকে বিসিএস এক্সামের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করলে দ্রুতই এক্সামের ভয় তাড়াতে পারবেন।
২. রুটিন তৈরি করা
বিসিএস প্রস্তুতি রুটিন বানাতে গিয়ে বেশিরভাগ পরীক্ষার্থী অবাস্তব ও কষ্টসাধ্য শিডিউল তৈরি করে থাকে। পরীক্ষার্থীরা এমন বিসিএস প্রস্তুতি রুটিন বানায় যেটা তাদের পক্ষে মেনে চলা সম্ভব না। রুটিন মেনে চলা সবার জন্যই কিছুটা চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু বাস্তবসম্মত একটি রুটিন বানালে আপনার পড়ার গতি আগাবে পাশাপাশি নিজের কাজকে ভালোভাবে মূল্যায়ন করতে পারবেন।
ধরুন আপনি ঘুম থেকে উঠেন সকাল ১০টায় কিন্তু রুটিনে ফজরের পর উঠে ২ ঘণ্টা পড়ার জন্য নির্ধারণ করে রেখেছেন। এটি সবথেকে ভুল কাজ। আপনি ২৪ ঘণ্টাকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করবেন যেমনঃ সকালে ঘুম থেকে উঠে ১ ঘণ্টা, নাস্তা করে ২ ঘণ্টা, দুপুরে ২ ঘণ্টা এভাবে বক্স সিস্টেম করে নিবেন। এই পদ্ধতিতে রুটিন তৈরি করলে সেটি যে কারো পক্ষে মেনে চলা সম্ভব। আমরা শীঘ্রই ২ মাসে বিসিএস প্রস্তুতি রুটিন পিডিএফ শেয়ার করবো।
রুটিন তৈরি সময় মাথায় রাখবেন যেকোনো বিষয়ে অনেক বেশি টাইম দেওয়া যাবে না। যেগুলো আপনার কাছে কঠিন মনে হবে সেখানে বেশি সময় দিবেন আর সহজগুলোতে কম সময় দিবেন। বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় আপনার সফলতা কেবল মাত্র ইংরেজি, গণিতের আর সাধারণ জ্ঞানের উপর নির্ভর করে না।
অন্যান্য বিষয়ে আপনাকে সমান গুরুত্ব দিতে হবে। অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় সাধারণ জ্ঞান থেকে যে প্রশ্নই করা হোক না কেন সে উত্তর দিতে পারবে কিন্তু গণিতের কিছুই পারে না। এমনটি মোটেও করা যাবে না। আর এইকাজে একটি ডিসিপ্লিনড রুটিন আপনাকে হেল্প করতে পারবে।
৩. বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতি বই
বিসিএস প্রস্তুতি নিতে গিয়ে আপনি বই কেনার সময় কৃপণতা করবেন তা মোটেও কাম্য নয়। সরকারি চাকুরি হিসেবে বিসিএস জব একটি গ্ল্যামারাস জব। চাকরির শুরুতে আপনার বেতন হবে ৩৬০০০ হাজার টাকা, এসি ক্লাসে ভ্রমণ, ফ্রি চিকিৎসা, বিশাল সরকারি বাসাতে নামমাত্র মূল্যে থাকাসহ প্রচুর সুযোগ সুবিধা পাবেন।
ফলে আপনাকে প্রচুর বই কিনতে হবে। তবে সেসকল বই কিনবেন যেগুলো আপনার জন্য প্রয়োজন। বন্ধুদের থেকে বই ধার করে পড়ার মানসিকতা ছাড়তে হবে। একজন লেখকের পক্ষে তাঁর বইয়ের একটা টপিকের সব তথ্য উপাত্ত দেওয়া সম্ভব হয় না।
ফলে একটি বিষয়ের উপর আপনাকে একাধিক বই কিনতে হবে। তবে আমরা একটি সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের তালিকা দিবো। এর বাইরে আপনার যে বই ভালো লাগে কিনতে পারেন।
বিসিএস বাংলা প্রস্তুতি
বিসিএস ভাষা ও ব্যাকরণ প্রস্তুতি বই
- ৯ম-১০ম শ্রেণির বাংলা ২য় পত্র বোর্ড বই
- নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ২য় পত্র বোর্ড বই বাজারে থাকা সকল ব্যাকরণ বইয়ের বস! এই বইটি আপনাকে খুবভালো করে আত্নস্থ করতে হবে। এটা আপনার বেসিককে অনেক বেশি শক্তিশালী করবে।
- তাছাড়া বইটি একদম নির্ভুল হওয়ায় নিশ্চিন্তে এটার তথ্যগুলো সিরিয়াসলি পড়বেন। পুরাতন এডিশনের বইটি পড়লে আরও বেশি ভালো হয়। BCS-এ বানান থেকে আসা প্রশ্ন নিয়ে আমাদের করা পোস্টটি পড়লে আপনার উপকার হবে।
- ভাষা শিক্ষা - হায়াত মামুদ
- বাংলা ব্যাকরণের জন্য যতগুলো বই বাজারে পাবেন তার মধ্যে এটি সেরা মানের বই। ভাষা শিক্ষা বইটি হায়াত মামুদ স্যারের নিজের লেখা (অনেক বই লেখকগণ অন্যদের সাহায্যে লিখে থাকেন)।
- তবে এই বইটির অনেক নকল বাজারে পাওয়া যায়। ফলে কেনার সময় যাচাই করে কিনবেন। বইটি আপনাকে এডভান্স অনেক তথ্য দিতে সক্ষম। তাছাড়া BCS-এ শব্দ থেকে আসা প্রশ্ন নিয়ে আমাদের এনালাইসিস পোস্ট পড়তে পারেন।
- জব সলুশন (সর্বশেষ সংস্করণ)
- জব সলুশন বই যেকোনো চাকরির প্রস্তুতির জন্য দরকারি একটি বই। জব সলিউশন মূলত আপনার সেলফ টেস্টকে সমৃদ্ধ করতে সাহায্য করবে। তবে আপনি কোন কোচিংয়ে ভর্তি হয়ে থাকলে বইটি কেনার প্রয়োজন নেই। সেখান থেকে জব সল্যুশন এর অনুরূপ বই দিবে।
- সেটি প্রচুর পরিমাণে সলভ করতে হবে। যত বেশি প্র্যাকটিস করবেন আপনার আত্নবিশ্বাস তত বেশি বাড়বে। যে টপিক পড়ে শেষ করবেন উক্ত টপিকের থেকে বিভিন্ন চাকুরীর পরীক্ষায় আসা প্রশ্নগুলো সমাধান করুন।
- বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা - সৌমিত্র শেখর
- যারা ব্যস্ত পরীক্ষার্থী তাদের জন্য ''সাহিত্য জিজ্ঞাসা'' বইটি খুবই উপকারী। আপনি চাকুরিরত বা ব্যস্ত একাডেমিক শিডিউলের মধ্যে বিসিএস প্রস্তুতি নিতে চাইলে এই একটা বই অবশ্যই পড়তে হবে।
- ব্যবহারিক বাংলা অভিধান - বাংলা একাডেমি
- অভিধান কি সেটা আপনারা জানেন। যেকোনো ভাষার সঠিক বানান, শব্দার্থ ও শব্দের ব্যবহার জানতে অভিধানের বিকল্প নেই। তাছাড়া "ব্যবহারিক বাংলা অভিধান" বহুল প্রচলিত ও নির্ভুল একটি বই।
- বাংলা ভাষার জীবনী - হুমায়ূন আজাদ
- বাংলা ভাষার জীবনী সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা পেতে এই বইটি পড়তে হবে। তবে যাদের সময় কম তারা হায়াত মামুদের ভাষা শিক্ষা থেকে এই অংশটুকু পড়তে পারেন অথবা সাহিত্য জিজ্ঞাসা বই থেকে পড়লেও চলবে।
বিসিএস বাংলা সাহিত্য প্রস্তুতি বই
- বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস - মাহবুবুল আলম
- এই বইটি অনেক বিশাল তথ্যের ভাণ্ডার। তাছাড়া এখানে সব তথ্য আপনার জন্য প্রয়োজনীয় না। ফলে এখান থেকে শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো মার্কার দিয়ে দাগিয়ে পড়বেন এবং রিভিশনের জন্য দাগানো লাইনগুলো পড়বেন।
- বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা - সৌমিত্র শেখর
- আগেই বলেছি ব্যস্ত পরীক্ষার্থীদের জন্য বইটি খুবই উপকারী। যাদের সময় নেই তারা এখান থেকে বিসিএস সাহিত্য প্রস্তুতি নিতে পারেন। তবে সময় নেই বলতে আপনার অলসতার কারণে সময় না থাকলে বিসিএস এক্সাম না দেওয়াই ভালো। কারণ একজন বিসিএস ক্যাডারকে চাকুরির শুরু থেকে শেষ প্রচুর কাজ করতে হয়।
- লাল নীল দীপাবলি - হুমায়ূন আজাদ
- এই বইটির অনেক তথ্য আছে যা আপনার কাজের না। ফলে এখান থেকে শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো মার্কার দিয়ে দাগিয়ে পড়বেন এবং রিভিশনের জন্য দাগানো লাইনগুলো পড়বেন।
বিসিএস ইংরেজি প্রস্তুতি বই
বিসিএস ইংরেজি গ্রামার বই
- English Grammar & Compositions Written by Wren and Martin
- আপনার বেসিক জ্ঞান বৃদ্ধি করার জন্য এই বইটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই বইটির P.C Das সম্পাদিত ভার্সন কিনতে হবে। সেটি বাংলা ভাষাভাষী শিক্ষার্থীদের টপিকগুলো ভালোভাবে বুঝতে সহযোগিতা করবে।
- English for Competitive Exams or English Tutor
- এখানে আমরা দুইটি বইয়ের নাম উল্লেখ করেছি। তবে আপনি যেকোনো একটি কিনবেন। বাজারে দেখে নিবেন যেটা ভালো মনে হয় কিনবেন। এই বইয়ের বিগত বিভিন্ন চাকুরি পরীক্ষা, ভর্তি পরীক্ষার প্রচুর প্রশ্ন পাবেন।
- এগুলো সলভ করলে আপনার ইংরেজির ভয় কাটবে এবং স্বল্প সময়ে বিসিএস প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি যেকোনো চাকরির পরীক্ষায় ইংরেজিতে ভালো করতে পারবেন। প্রশ্নগুলো পড়ার পাশাপাশি যে ব্যাখ্যা দেওয়া আছে সেগুলো সাথে সাথে পড়ে ফেলবেন।
- Longman Dictionary of Common Errors
- এখান থেকে বিভিন্ন গ্রামারের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা পাবেন। চাকরি প্রস্তুতিতে ইংরেজির ক্ষেত্রে সবাই যে কমন ভুলগুলো করে সেগুলো আপনার হবে না। ফলে স্বচ্ছ ধারণা পাবেন।
- Potential English Grammar and Composition by Md. Khalilur Rahman
- এই বইটি আপনাকে ইংরেজি বাক্য গঠন সম্পর্কে খুব ভালো আইডিয়া দিবে। আমার কাছে এই বইটির বাক্য গঠন অনেক স্মার্ট মনে হয়েছে। আর ওদের বাক্যগুলো খুব বোল্ড একটা মিনিং দেয় যেটা Advance Learner's বইটিতে পাইনি।
- Practical English Usage by Michael Swan (Oxford University থেকে প্রকাশিত)
- Michael Swan এর এই বইটি বেশির ভাগ বিসিএস ক্যাডারগণ সাজেস্ট করে থাকেন। যারা বইটি পড়েছেন তারা ইতোমধ্যে জানেন বিশুদ্ধভাবে ইংরেজি শেখার জন্য এর কোন বিকল্প বাজারে নেই।
- যদি কোন বইয়ের ব্যাখ্যাতে আপনি সন্তুষ্ট না হন তবে সোজা এই বইয়ে উক্ত টপিকটি খুঁজবেন। নীলক্ষেত এটার প্রচুর পাইরেটেড কপি পাওয়া যায়। ফলে কেনার সময় বুঝে শুনে কিনবেন।
বিসিএস ইংরেজি ভোকাবুলারি বই
- Bangla Academy Dictionary (English to Bangla)
- বাংলাদেশে যতগুলো ডিকশনারি আছে তার মধ্যে এটি সব থেকে অথেনটিক। অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন Oxford Advanced Learner's Dictionary এর নাম কেন বললাম না? এটির মূল কারণ এটার আসল কপি যেটা Oxford University থেকে প্রকাশিত তার বর্তমান মূল্য ১৫০০ টাকা।
- তাছাড়া আসল কপি সহজে পাওয়া যায় না। অন্যদিকে বাংলা একাডেমী ডিকশনারি সম্পূর্ণ নির্ভুল ও সর্বশেষ বানানরীতি অনুসরণ করায় এটি অনায়সে ফলো করতে পারেন।
- Mentor's MBA preparation Guide
- মেন্টর'স এমবিএ প্রস্তুতি বই থেকে Synonyms & Antonyms পড়ে ফেলুন। যেগুলো নতুন মনে হবে বা আগে কখনও পড়েননি এমন শব্দ ডায়েরিতে লিখে ফেলুন। পারলে এগুলো দিয়ে একটি করে বাক্য গঠন করুন। প্রতি এক সপ্তাহ পর পর এগুলো রিভিশন দিন।
- Longman Dictionary of Contemporary English
- এটিও Mentor's MBA preparation Guide এর মত পড়ুন। বিশ্বস্ত বই হওয়ায় এটা থেকে সরাসরি কমন পাওয়া যায়।
- The Daily Star (Newspaper)
- ডেইলি স্টারে ভোকাবুলারি, Idioms and Phrases, বিভিন্ন আকর্ষণীয় বাক্য ও শিরোনাম এগুলো টুঁকে রাখবেন। এটা আপনাকে রিটেন এক্সামেও সহযোগিতা করবে। এখান থেকে প্রাপ্ত ভোকাবুলারি নোট করে রাখুন। এগুলো চেষ্টা করবেন মাসে একবার হলেও রিভিশন দেওয়ার।
বিসিএস ইংরেজি সাহিত্য বই
- A Handbook on English Literature By Sharif Ahmed Chowdhury
- বইটি থেকে এলিজাবেথ পিরিয়ড হতে ২১ শতক পর্যন্ত প্রতিনিধিত্বকারী লেখকগণের বইয়ের নাম, লেখার ধরণ, বুকার ও নোবেল পুরুস্কার প্রাপ্তি এই তথ্যগুলো মুখস্ত করে রাখুন। তবে কোন লেখকের সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য না পেলে গুগলে সার্চ করে দেখতে হবে। সাহিত্য অংশে খুব বেশি সময় দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
বিসিএস বাংলাদেশ বিষয়াবলী বই
- নবম দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বই
- উচ্চমাধ্যমিক পৌরনীতি ২য় পত্র
- বাংলাদেশের অভ্যুদয়, সরকার ব্যবস্থা, রাজনৈতিক অবস্থা এই তিনটি বিষয় পড়ে ফেলুন। এখানে দেওয়া সকল তথ্য নির্ভরযোগ্য এবং বইটি আপনার প্রাথমিক পর্যায়ের জ্ঞানকে বৃদ্ধি করবে।
- বাংলাদেশের সংবিধান (সর্বশেষ সংশোধনী)
- জুবায়ের'স জিকে
- পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ রিপোর্ট
- সাম্প্রতিক বাজেটের কপি
- বাংলাদেশের মানচিত্র
বিসিএস আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী বই
- প্রথম আলো পত্রিকা (আন্তর্জাতিক অংশ)
- আজকের বিশ্ব (আন্তর্জাতিক অংশ)
- এন্ড্রয়েড এপসঃ 1. International Relations by Daniel Rust, 2. Daily Star Bangladesh App,
- World Map
নোটঃ সাধারণ জ্ঞানের বেলায় পাকাপোক্ত তথ্যগুলো আগে পড়ে নিবেন। বিশেষ করে সাম্প্রতিক কোন তথ্য পড়া যাবে না। কারণ এগুলো প্রায়ই পরিবর্তিত হয় এবং হবে। সাম্প্রতিক তথ্যগুলো পত্রিকা থেকে দেখে নিবেন। তবে পত্রিকা কিনতে না চাইলে গুগল প্লে স্টোর থেকে উক্ত পত্রিকার এপস নামিয়ে নিতে পারেন।
সাম্প্রতিক তথ্যগুলো নোট করে রাখার চেষ্টা করবেন। তবে সাধারণ জ্ঞানে সব থেকে কমন বিষয় বিভিন্ন বইয়ের অনেক ভুল তথ্য থাকতে পারে। এগুলো এড়িয়ে চলা উচিত। সাধারণ জ্ঞানে ভালো করতে চাইলে বেশি বেশি এক্সাম দিতে হবে।
বিসিএস ভূগোল প্রস্তুতি বই
- বিসিএস সংক্ষিপ্ত সাধারণ জ্ঞান - কনফিডেন্স রিসার্চ ওয়ার্ক প্রকাশিত
- নবম ও দশম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বোর্ড বই
- বিসিএস ভূগোল, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বই
বিসিএস সাধারণ বিজ্ঞান বই
- ৮ম থেকে ১০ম শ্রেণির সাধারণ বিজ্ঞান বই
- MP3 বিজ্ঞান গাইড
বিসিএস কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি প্রস্তুতি বই
- উচ্চ মাধ্যমিক কম্পিউটার বই - মাহবুবুর রহমান
- MP3 প্রিলিমিনারি বিজ্ঞান (কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি)
- মাধ্যমিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বোর্ড বই (পুরাতন)
নোটঃ ভূগোল, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, সাধারণ বিজ্ঞান এবং কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে ভালো করার জন্য ভালোমানের কোন বই ফলো করতে হবে। এখানে যেসকল বই উল্লেখ করা হয়েছে এগুলো পড়ার পাশাপাশি জব সল্যুশন থেকে প্রশ্ন সমাধান করতে হবে।
বিসিএসসহ যেকোনো প্রতিযোগীতা মূলক পরীক্ষার জন্য কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ের পড়া অনেকের কাছে ঝামেলার মনে হতে পারে। কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি প্রস্তুতি নিতে ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন সলভ করলে উপকার পাওয়া যাবে।
বিসিএস গাণিতিক যুক্তি প্রস্তুতি বই
- Math Tutor বই
- ৭ম থেকে ১০ শ্রেণির গণিত বোর্ড বই
- শাহীনস ম্যাথ
বিসিএস মানসিক দক্ষতা প্রস্তুতি বই
- এমবিএ পরীক্ষার প্রশ্নব্যাংক
- আইএসএসবি পরীক্ষার প্রশ্নব্যাংক (সশস্ত্র বাহিনী নিয়োগ পরীক্ষা)
- বাজারের যেকোনো ভালো একটি বই
বিসিএস নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন বই
- উচ্চ মাধ্যমিক পৌরনীতি ও সুশাসন বই
- নাগরিকদের জানা ভালো - হাবিবুর রহমান
- নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন - সাইফুর'স পাবলিকেশন
৪. দৈনিক পত্রিকাপাঠঃ কী পড়বেন, কিভাবে পড়বেন
বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য পত্রিকা পড়ার ধরণ অত্যন্ত গোছালো হতে হবে। অন্যান্য সাধারণ পাঠকের মত পত্রিকা খুলে খেলাধুলা ও বিনোদনের খবরে চলে যাওয়া যাবে না। বিসিএস প্রস্তুতির জন্য একটি পত্রিকার সকল বিষয় পড়ার প্রয়োজন নেই।
বিসিএস পরীক্ষার্থীদেরকে পত্রিকার কিছু আর্টিকেল না বুঝেই পড়ে যেতে হবে কিছু আর্টিকেল শুধু চোখ বুলাতে হবে আর কিছু আর্টিকেল লিখে লিখে মুখস্ত করে ফেলতে হবে। অনলাইন নিউজপেপারের মধ্যে Banglanews24.com, prothomalo.com পড়া বেস্ট।
পত্রিকার সম্পাদকীয়, প্রবন্ধ, রিসার্চ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক, ক্রাইসিস রিপোর্ট, আলোচিত আবিষ্কার, বিশ্বরেকর্ড, সম্মেলন, প্রযুক্তি, নতুন রোগ, বিভিন্ন টার্ম ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে। পত্রিকা পড়ার সময় হাতের কাছে মার্কার এবং রাখতে হবে।
পত্রিকার গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো চিহ্নিত করে ডায়েরিতে লিখে রাখতে হবে। লিখিত বিষয়গুলো প্রতি সপ্তাহে একবার রিভিশন দিতে হবে।ইংরেজি পত্রিকার ক্ষেত্রে ডেইলি স্টার অথবা বাংলা ট্রিবিউন পড়তে পারেন। তবে বাংলা ট্রিবিউনে প্রতিদিন নতুন নতুন কিছু অপ্রয়োজনীয় ইংরেজি শব্দ দেয় যা প্রস্তুতির সময় নষ্ট করতে পারে।
৫. নোট তৈরি করা
পড়া আত্মস্থ করার পর আমাদের মূল লক্ষ্য থাকে তা ব্রেইনে ধরে রাখা। তবে এটি সবথেকে কষ্টসাধ্য কাজ কেননা আমাদের ব্রেইন একটি জিনিসকে বেশিদিন ধরে রাখতে পারেনা যদি না আমরা সেটি বারবার রিভিশন দেই।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে আমরা যা পড়ি ২৪ ঘন্টার মধ্যে তার ৬০-৮০% আমাদের ব্রেইন ধরে রাখতে পারেনা। অনার্স থেকে বিসিএস প্রস্তুতি নিলে নোট তৈরি করে পড়া উচিত। কারণ পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায় এবং এই নোটগুলো অন্যান্য চাকুরির পরীক্ষাতেও সাহায্য করবে।
ফলে আপনি নোট করে পড়লে একদিকে যেমন লেখার কাজটি হবে একইভাবে আপনার চোখ দিয়েও দেখা হয়ে যাবে। তাছাড়া সুন্দর ও গোছালো নোট যে কারো পছন্দ। পরীক্ষার আগের দিন আপনি কোন বই না ধরে শুধুমাত্র নোট খাতাতে চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন।
তবে নোট খাতায় শুধুমাত্র গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলোকে স্থান দিতে হবে। নোট করার সময় তাড়াহুড়ো করবেন না আর বিভিন্ন রঙয়ের কালি ব্যবহার করে সময় নষ্ট করতে যাবেন না।
৬. গ্রুপ স্টাডি এড়িয়ে চলা
পরীক্ষায় ভালো করার উপায় বা পড়া মনে রাখার উপায় সংক্রান্ত সব পোস্টে গ্রুপ স্টাডির পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু এটি পড়ার সময় নষ্ট করার অন্যতম নিয়ামক। বিশেষ করে গ্রুপে বাচাল বা অমনযোগী পরীক্ষার্থী থাকলে, ইতিহাস, রাজনীতি, প্রবন্ধ বিষয়ক পড়াশোনা এসব ক্ষেত্রে পড়ার পরিবর্তে সময় অপচয় বেশি হয়ে থাকে।
গ্রুপ স্টাডির ক্ষেত্রে যারা সত্যিকার অর্থে বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নিতে চায় তাদেরকে খুঁজে বের করুন। সপ্তাহে দুই দিনের বেশি গ্রুপ স্টাডি করা যাবে না। গ্রুপে বিভিন্ন বিষয়ে পটু এমন সদস্য রাখুন যেমনঃ একজন ইংরেজি ভালো পারে, কেউ গণিত ভালো পারে এভাবে সমন্বয় করে মেম্বার সিলেক্ট করবেন।
গ্রুপে সাধারণত জব সল্যুশন ও বিগত বছরে বিসিএস এক্সামে আসা প্রশ্নসমূহ পড়বেন। গ্রুপ স্টাডির ক্ষেত্রে ৬ জনের বেশি সদস্যা রাখা যাবে না। তবে ৩ জনের গ্রুপ হলে সব থেকে ভালো হয়। যত বেশি সদস্য নিবেন তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা তত মুশকিল হয়ে উঠবে। গ্রুপে কী পড়বেন, কত সময় পড়বেন তা আগেই নির্ধারন করে রাখুন।
গ্রুপ স্টাডি করার নিয়ম বা আচরণ বিধি ঠিক করে নিতে পারলে ভালো। এতকিছু করার কথা শুনে আপনার কাছে হাস্যকর লাগতে পারে। কিন্তু এতে আপনারই উপকার হবে নতুবা এসব ছাড়াই একদিন গ্রুপ স্টাডি করে দেখতে পারেন!
৭. বিসিএস প্রশ্নব্যাংক সলভ করা
যেকোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য প্রশ্ন ব্যাংক সলভ করার কোন বিকল্প নেই। আপনি যত বেশি বেশি প্রশ্ন ব্যাংক সলভ করবেন, আপনার বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন তত নিকটে আসবে। প্রশ্নব্যাংক সলভ করে কোনোদিন হুবহু কমন পাবেন না।
কিন্তু এটি আপনার জন্য মডেল সাজেশন হিসেবে কাজ করবে। প্রচুর পরিমাণে প্রশ্নব্যাংক সমাধান করতে করতে আপনি বুঝে ফেলবেন ঠিক কোন অংশটা বেশি বেশি পড়তে, কোথা থেকে প্রশ্ন কম আসে ইত্যাদি।
তবে প্রশ্নব্যাংক কিভাবে সলভ করতে হয় সে সম্পর্কে আপনার জানা প্রয়োজন। অনেকেই গুগল প্লে স্টোর থেকে বিসিএস প্রস্তুতি app ইনস্টল করে থাকেন। তবে এইসকল এপসে প্রচুর ভুল উত্তর ও ব্যাখ্যা দেওয়া থাকে। ফলে আপনি যেকোনো ভালো প্রকাশনীর বিসিএস প্রশ্নব্যাংক কিনে পড়া শুরু করতে পারেন।
পড়ার সময় যে টপিক থেকে প্রশ্ন এসেছে সে টপিকের নাম লিখে রাখবেন। এরপর উক্ত প্রশ্নটি বইয়ের কোথায় কোন লাইনে আছে তা বের করে দাগিয়ে ফেলুন। বিসিএসে প্রায়ই দেখা যায় বইয়ের যে লাইন থেকে প্রশ্ন আসে ঠিক ওই প্যারা থেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয়।
প্রশ্নব্যাংক না দেখে সলভ করার চেষ্টা করবেন তবে দেখে করলে সেটা কোন কাজে দিবে না। কোন সালের প্রশ্ন সবগুলো সলভ করা শেষ হলে ২-৩ দিনের মধ্যে সেটির উপর সেলফ টেস্ট দেওয়া শুরু করুন। আমরা শীঘ্রই ব্যাখ্যাসহ বিসিএস প্রশ্নব্যাংক এক্সাম চালু করতে যাচ্ছি। ফলে পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের পোস্টটি বুকমার্ক করে রাখুন।
৮. স্মার্ট রিভিশন মেথড
পড়া রিভিশন দেওয়া নিয়ে আমরা সবাই কম বেশি ঝামেলায় পড়ে থাকি। সবচেয়ে বেশি ঝামেলা হয় কোনটা রেখে কোনটা পড়বো এই সিদ্ধান্ত নিতে। যদি এমন হয় যে পরীক্ষার ঠিক আগে আগে আপনি সম্পূর্ণ নতুন একটা চ্যাপ্টার পড়েছেন, তাহলে Recapped, Reviewed and Reinforced- এই 3R-এর ওপর গুরুত্ব দিবেন।
যে কোন নতুন তথ্য শিখে সেটা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রিভিশন না দিলে ৮০%-ই ভুলে যাবার সম্ভাবনা থাকে। তাই শেখা জিনিস ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই রিভিশন দিবেন। কারণ একটা জিনিস শেখার সাথে সাথে রিভিশন না দিলে ০১ মাস পর সেই একই জিনিস নতুন করে আপনার পড়া লাগবে।
কিন্তু ১০-১২ মিনিট সময় নিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রিভিশন দিলে ভুলে যাওয়ার সম্ভবনা ০% থাকে। ফলে চিন্তা করে দেখুন ১০০ মিনিট খরচ করে একই পড়া পুনরায় পড়া ভালো না ১০-১২ মিনিট খরচ করে রিভিশন দেওয়া?
পড়া রিভিশন দেওয়ার জন্য উত্তম সময় হলো রাতে ঘুমানোর আগে রিভিশন দেওয়া। আমরা যখন ঘুমাই তখন ব্রেইন আমাদের সবগুলো স্মৃতিকে একত্রিত করে জমা রাখে। আর ঘুমানোর ঠিক আগে যে কাজ করি সেটা ব্রেইনে ভালোভাবে সংরক্ষণ করা থাকে। কাজেই পড়া রিভিশন কিংবা কঠিন বিষয় পড়া এই সকল কাজ ঘুমানোর আগে করা উচিত।
৯. সেলফ এক্সাম দেওয়া
যেকোনো কাজের জন্য সময়ের গুরুত্ব অপরসীম। একইভাবে পরীক্ষায় ভালো করতে হলেও টাইম ম্যানেজমেন্টের গুরুত্ব অনেক বেশি। টাইম ম্যানেজমেন্ট বলতে অনেকে বুঝে থাকে সময় মত পরীক্ষা শেষ করা যা সম্পূর্ণ ধারণা। পরীক্ষাতে এমন কিছু প্রশ্ন দেওয়া হয় যেটা সবাই পারে কিন্তু সলভ করতে ৫-৬ মিনিট লেগে যাবে।
অথচ প্রশ্ন প্রতি আপনাকে ১ মিনিট সময় দেওয়া হবে। এই জাতীয় প্রশ্ন করা হয় সময় ব্যবস্থাপনা বুঝার জন্য যারা সেলফ টেস্ট দেয় তারা সমাধান জানলেও এই জাতীয় বড় প্রশ্ন এড়িয়ে যায়। অন্যদিকে অনেকে একটা প্রশ্নে ৫ মিনিট অপচয় করে পরে অনেক জানা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না।
সেলফ এক্সাম দেওয়ার জন্য বাজার থেকে ওএমআর শিট কিনে আনতে পারেন। এরপর কোন মডেল টেস্ট বই থেকে বৃত্ত ভরাট করে নিজে নিজে এক্সাম দিন ও মূল্যায়ন করুন। এভাবে এক্সাম দিলে বৃত্ত পূরণে আপনার সময় কম লাগবে।
তাছাড়া সময় ব্যবস্থাপনার উপর দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ৪-৫টি ছোট এক্সাম (৫০টি এমসিকিউ এর উপর) এবং ১-২টি বড় এক্সাম (২০০টি এমসিকিউ এর উপর) দেওয়ার চেষ্টা করুন।
এক্সাম দিলেই হবে না সাথে সাথে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করে নিবেন। ঠিক কোন টপিকের প্রশ্নগুলো পারেননি, কোনগুলো একদম নতুন মনে হয়েছে চিহ্নিত করে রাখুন। রিভিশন দেওয়ার সময় উক্ত টপিকগুলো বারবার দেখবেন।
তাছাড়া আপনার শুদ্ধতার হার বের করে রাখলে আরও ভালো। যেমনঃ ২০০টা এমসিকিউ এর মধ্যে কত শতাংশ আপনি দাগিয়েছেন, কত শতাংশ ভুল করেছেন আর কত শতাংশ সঠিক হয়েছে। আজকে যদি ৬০% সঠিক হয় আগামীকাল ৬৫% সঠিক করার চেষ্টা করবেন।
এভাবে নিজের সাথে নিজের প্রতিযোগিতা করুন যা খুবই ফলপ্রসূ হবে। তাছাড়া আপনি বাসায় এক্সাম দিয়ে গড়ে আপনার দাগানো এমসিকিউ এর ৭০% সঠিক হলে মূল এক্সামে শুদ্ধতার হার প্রায় একই রকম থাকবে। ফলে চেষ্টা করবেন এই % বাড়ানোর জন্য।
১০. সিস্টেম লস কমানো
মানুষের মস্তিষ্ক একটানা ২৫ মিনিটের বেশি সময় মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না। তাছাড়া পড়ার মাঝে বারবার উঠে যাওয়া, ফোন চালানো, শুয়ে শুয়ে পড়া এগুলো শরীরকে নিস্তেজ করে তোলে। ফলে আমরা পড়ায় মনোযোগ হারিয়ে ফেলি এবং একটি টপিক শেষ করতে সারাদিন পার হয়ে যায়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে আমরা যা পড়ি তার প্রথম ও শেষের অংশ ভালোভাবে ব্রেইনে সংরক্ষণ করা থাকে।
কিন্তু মাঝের অংশ স্মৃতিতে ধরে রাখতে পারি না ফলে এখানে আমাদের পণ্ডশ্রম হয়। কারণ একটানা দীর্ঘ সময় পড়লে চোখে ঘুম ঘুম ভাব চলে আসে এবং মস্তিষ্কের পেশিগুলো টান টান হয়ে যায় যা মনোযোগ নষ্টের নিয়ামক। তবে আগেই বলেছি পড়ার মাঝে বারবার উঠলেও মনোযোগ নষ্ট হয়, তাহলে করণীয় কী?
একটানা যতক্ষণ পড়বেন সেটিকে ছোট ছোট ইউনিটে ভাগ করে নিন। ধরুন আপনি চার ঘণ্টা একটানা পড়তে চাইলে এটিকে ৪০ মিনিট করে ৬টি ইউনিটে ভাগ করে নিন। প্রতি ৪০ মিনিট পরপর আপনি বিশ্রাম নিবেন এবং চাইলে একটু চা পান করতে পারেন।
তবে বিশ্রাম নেওয়ার সময় টিভি দেখা, বন্ধুদের সাথে চ্যাটিং করা, বাইরে যাওয়া এসব করা যাবে না। চোখ বন্ধ করে লম্বা লম্বা শ্বাস নিতে থাকুন। এতে করে ব্রেইনে অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে এবং বিচ্ছিন্ন সব তথ্য একত্রিত করতে পারবে।
১১. ব্যাচিং মেথড
ব্যাচিং মেথড ব্যস্ত পরীক্ষার্থীর সময় বাঁচিয়ে দিতে পারে। ব্যাচিং মেথড হচ্ছে, দশ দিনের কাজগুলাে গুছিয়ে একদিনে বেশি সময় দিয়ে সেরে ফেলা। ধরুন, আপনি এক মাসে ৩০ দিনে ৪ ঘন্টা করে মােট ১২০ ঘন্টা পড়াশুনা করেন।
সেই পড়াটা দিনে ১২ ঘন্টা পড়াশুনা করে ১০ দিনে শেষ করে ফেলাটাই ব্যাচিং মেথড। বিসিএস পরীক্ষার্থীদের অন্তত ৩০-৪০% ব্যস্ত চাকরিজীবী বা অনলাইন ব্যবসায়ী অথবা পার্ট টাইম শিক্ষক।প্রতিদিন রুটিন করে ৫-৬ ঘন্টা পড়াশুনা করা অনেক ব্যস্ত পরীক্ষার্থীর পক্ষেই সম্ভব নয়। আপনার ক্ষেত্রে দারুণ কাজে দিতে পারে ব্যাচিং মেথড।
তবে সব বিষয় ও টপিকের জন্য ব্যাচিং মেথড -এ পড়াশুনা করা কার্যকর ফল বয়ে আনে না। তাছাড়া ব্যাচিং মেথডে পড়াশুনা করলে শরীর ও মনের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়তে পারে। যে বিষয়গুলাে ধীরে সুস্থে ও মনােযােগ দিয়ে পড়তে হবে সে বিষয়গুলাে ব্যাচিং মেথডে পড়বেন না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। যে যে বিষয়ে ব্যাচিং মেথড প্রয়ােগ করবেনঃ
১। অনলাইন/ মােবাইল অ্যাপস/ মডেল টেস্টের বই থেকে একসাথে অনেকগুলাে টেস্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে।
২। পাঠ্যবই থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও কমগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলাে আলাদা আলাদা করে লিখে রাখার ক্ষেত্রে।
৩। যে বিষয়গুলাে আপনার একেবারেই পড়ার দরকার নেই (হতে পারে তা আগে থেকেই জানেন বা কম গুরুত্বপূর্ণ) তা এক-দুই দিনে আলাদা করে সনাক্ত করে বাদ দিতে চাইলে ব্যাচিং মেথড প্রয়ােগ করবেন।
১২. '৮০-২০' রুলের প্রয়োগ
আপনার সিলেবাসের এমন ২০% আইটেম আছে যা আগে শেষ করলে সিলেবাসের ৮০% আইটেম শেষ করার প্রায় সমান বেনিফিট পাওয়া। শুনে হয়ত অবাক হচ্ছেন এবং প্রশ্ন জাগতে পারে এমন আইটেম আবার কোনগুলো?
যেখান থেকে প্রতি বছর বিসিএস পরীক্ষায় নিশ্চিত প্রশ্ন আসবেই সেগুলো ওই ২০% আইটেম। যেহেতু সেসব থেকে নিশ্চিতভাবে প্রশ্ন কমন পরে ফলে সেগুলো আগে শেষ করলে আপনার ৮০% আইটেম শেষ হয়ে যাবে। এমন টপিক পেন্সিল দিয়ে মার্ক করে বা নোট খাতায় লিখে আলাদা করুন।
সাদা চোখে ২০% আইটেম গাণিতিকভাবে ৮০% আইটেমের সমান দেখাবে না। আমি সার্বিক প্রস্তুতিতে গুরুত্বপূর্ণ ২০% আইটেমের প্রভাবের (Impact) কথা বােঝাতে চেয়েছি। প্রথম ধাপে ২০% আইটেম শেষ করে বাকি ৮০% আইটেমের উপর পুনরায় ৮০-২০ রুল প্রয়ােগ করুন। যদি সময় থাকে এভাবে তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপেও এই রুল প্রয়ােগ করে পড়া যায়।
এভাবে করতে থাকলে একসময় অতি গুরুত্বপূর্ণ থেকে কম গুরুত্বপূর্ণ সব পড়া আপনার শেষ হয়ে যাবে। যারা পুরাে সিলেবাসের একটি নির্দিষ্ট ভাগকে টার্গেট করে প্রস্তুতি নিতে চান তাদের জন্য '৮০-২০' রুল হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ একটি মেথড। ‘৮০-২০' রুল প্রয়ােগের ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই কৌশলী, দূরদর্শী ও এনালিটিক্যাল(analytical) হতে হবে।