এডমিশন টিউন https://www.admissiontune.com/2021/10/gst-admission-test-update.html

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা কাল, আসনপ্রতি লড়বেন ১১ জন

গুচ্ছভুক্ত ২০টি সাধারণ ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আগামীকাল রোববার (১৭ই অক্টোবর, ২০২১) বেলা ১২টায়। এদিন বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত গুচ্ছ ‘ক’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষা এর মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হবে এবছরের সবচেয়ে বড় ভর্তি পরীক্ষা। ক ইউনিটে ২২ হাজার ১৩টি আসনের বিপরীতে পরীক্ষায় প্রতি আসনে লড়ছেন ১১ জন শিক্ষার্থী। 'ক' ইউনিটে মোট আবেদন জমা আবেদন করেছেন ২ লাখ ৩২ হাজার ৪৫৫ জন শিক্ষার্থী। 
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা, gst admission test, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা কবে, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আপডেট, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা ২০২১, gst admission test update, gst admission 2021
এদিকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ না পাওয়া শিক্ষার্থীরা বলছেন, অটোপাসের কারণে চরম বৈষম্যের শিকার হয়েছেন ২০২০-২১ ব্যাচের পরিক্ষার্থীরা। ২০২০ সালে এইচএসসি পরীক্ষা না হওয়ায় তাদের ফল খারাপ হয়েছে বলে অনেকে দাবি করেছেন। পরীক্ষা হলে তাদের ফল আরও ভালো হতো। অধিক সংখ্যক জিপিএ-৫ ও পেত না। এতে করে ভর্তি পরীক্ষায় কম যোগ্যতা চাওয়া হত ফলে অধিক সংখ্যক ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেত।
তাছাড়া গুচ্ছের সিলেকশন প্রক্রিয়ার কারণেও অনেক পরিক্ষার্থীরা অসন্তুষ্ট হয়েছেন; বিভাগ পরিবর্তনের জন্য আলাদা ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা না নেওয়া নিয়েও অসন্তুষ্ট শিক্ষার্থীরা। বিসয়টি সমাধানে আদালত পর্যন্ত গেছেন ভর্তিচ্ছুরা। বিষয়টি এখনো বিচারাধীন রয়েছে। যদিও আদালতের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার কথা জানিয়েছে গুচ্ছ ভর্তি কমিটি।

এ প্রসঙ্গে ন্যাশনাল আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী সাদ বলেন, "গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা যতটা না শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘব করেছে, তার চেয়ে বেশি হতাশার সৃষ্টি করেছে। প্রথম থেকেই গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতিতে একের পর এক পরিবর্তন এনে শিক্ষার্থীদের চরম বিপর্যস্ত করা হয়েছে । ২০১৬ সালের এসএসসি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা গত বছরও গুচ্ছতে থাকা অন্তত ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু এবছর সে সুযোগটি নেই। যার কারণে হতাশায় ভুগতে হচ্ছে ২০১৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী সহ বহু সেকেন্ড টাইমারদের।"
শিক্ষার্থীরা বলছেন, করোনার কারণে গত দেড় বছর ধরে তারা নানা মানসিক পীড়ায় ভুগছেন। তার উপর গুচ্ছ কমিটির একের পর এক নিত্য নতুন সিদ্ধান্তের কারণে মানসিক বিপর্যয়ের চরম সীমায় পৌঁছে গেছেন শিক্ষার্থী ও অভিবাভকেরা। এমতাবস্থায় অবস্থায় তাদের অনেকে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে পড়ালেখা করার পর ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ না পাওয়ার কষ্ট তাদের চেয়ে ভালো কেউ বুঝবে না। 

বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থী কানিজ ফাতেমা জানান, "গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজক কমিটি প্রথমে বলল তারা প্রতি ইউনিটে দেড় লাখ শিক্ষার্থীকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেবেন। আমরা সেটি মিনে নিলাম। কিন্তু পরে তারা মাত্র ১ লাখ ৩১ হাজার শিক্ষার্থীকে ভর্তি পরীক্ষার জন্য সিলেকশন করলো। এই সিলেকশন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রথম থেকেই শিক্ষার্থীরা বিরোধিতা করে আসছিল। তবে গুচ্ছ কমিটি শিক্ষার্থীদের কোনো কথাই আমলে নেয়নি।"
মতিঝিল সরকারি বালক স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী সেলিম মাহমুদ ইয়াসিন গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরে বলেন, "এক দৃষ্টিকোণ থেকে গুচ্ছ পদ্ধতির সব চেয়ে ভালো দিক হলো এখানে কেবল একটি পরীক্ষা হওয়ার কারনে যাতায়াত, সময় ও আর্থিক দিক থেকে শিক্ষার্থীদের হয়রানি কমেছে। 

অন্যদিকে এর একটি নেগিটিভ ইফেক্ট এই যে, কোনো কারণবসত উক্ত দিনে কোনো শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় পারফরম্যান্স খারাপ হলে এর প্রভাব ও ফলাফল তাকে আজীবন বহন করতে হবে। যেহেতু গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় পরবর্তীতে সেকেন্ড টাইম থাকবে না তাই বিষয়টাতে শিক্ষার্থীরা চিন্তিত। এই বছরই প্রথম গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা হতে যাচ্ছে তাই প্রিপারেশনের জন্য অনেকটা বেগ পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের, যদিও কর্তৃপক্ষ বলেছে যে সকল প্রশ্নই এইচএসসি'র সিলেবাস মোতাবেক হবে তবুও প্রশ্নের ধরন নিয়ে একটা ধোয়াশা থেকেই যাবে। 
তবে এখন দেখার বিষয় পরীক্ষার পর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় তাদের একক সার্কুলার কিরুপ করে। ইতিমধ্যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছকে কেন্দ্র করে সার্কুলার প্রকাশ করেছে এবং সেগুলো নিয়েও শিক্ষার্থীদের মধ্যে চলছে সমালোচনা। তবে দিন শেষে গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা পদ্ধতিকে প্রশংসনীয় কাজ বলে মনে করছি।"
গুচ্ছ ভর্তি কমিটির মাধ্যমে জানা গেছে, ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগসহ তিনটি ইউনিটে রয়েছে মোট ২২ হাজার ১৩টি  আসন। এর বিপরীতে আবেদন করেছেন দুই লাখ ৩২ হাজার ৪৫৫ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ‘এ’ ইউনিটে এক লাখ ৩১ হাজার ৯০১ জন, ‘বি’ ইউনিটে ৬৭ হাজার ১১৭ জন এবং ‘সি’ ইউনিটে ৩৩ হাজার ৪৩৭ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেছেন।

গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন হবে উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে, ফলে কোন ইউনিটে সাধারণ জ্ঞান থাকবে না। এতে মোট ১০০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষা নেওয়া হবে। পরীক্ষায় প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য কাটা যাবে ০.২৫ নম্বর। তবে বিভাগ পরিবর্তনের জন্য আলাদা কোনো পরীক্ষা নেওয়া হবে না। এটি নিয়ে এখনও আদালত কোন রায় দেয়নি।

গুচ্ছ ভর্তি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন বলেন, "পরীক্ষাগুলো সুষ্ঠুভাবে নিতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আমরা শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করবো। আশা করি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি কমে আসবে। আমাদের প্রত্যাশা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও আগামী বছর এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হবে।"

তিনি আরও উল্লেখ করে বলেন, "ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষায় ডিজিটাল জালিয়াতি ঠেকাতে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছি। পরীক্ষার সময় কেন্দ্র এবং কেন্দ্রের বাইরে বিভিন্ন টেকনিক্যাল টিম পর্যবেক্ষণে থাকবে।"
ইতোমধ্যে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্র ডাউনলোডের কাজ শেষ হয়েছে। গুচ্ছের আসনবিন্যাস নিয়ে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও ভর্তি নির্দেশিকায় আগে থেকেই আসনবিন্যাস সম্পর্কে উল্লেখ ছিল। তবে এই বিষয়ে জানতে চাইলে গুচ্ছ ভর্তি কমিটি থেকে জানানো হয়েছে আসন পরিবর্তনের আর কোন সুযোগ নেই। 

যে ২৬টি কেন্দ্রে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা হবে সেগুলো হলো- শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শেরে-ই বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

এবছর গুচ্ছভুক্ত ২০ বিশ্ববিদ্যালয় হলো: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
সবার সাথে শেয়ার করুন
এই পোস্টে 0 জন কমেন্ট করেছেন

এডমিশন টিউন কী?